কিরণ মান্না: দীঘা (Digha) ঢোকার মুখে ঘেরসাইতে রাস্তার কাজের খাদে পড়ে গিয়ে ঘটল বাস দুর্ঘটনা (Bus Accident)। আহত হলেন পর্যটকেরা। পুলিস ও স্থানীয় যুকদের চেষ্টায় উদ্ধার যাত্রীরা। আহতদের দিঘা রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা?
বাস দুর্ঘটনা
পূর্ব মেদিনীপুরের পর্যটন কেন্দ্র দিঘা ঢোকার মুখে ঘেরসাই-এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্য। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে দিঘাগামী একটি পর্যটক-সহ যাত্রীবোঝাই বাস রাস্তার পাশে চলা নির্মাণ কাজের গভীর খাদে পড়ে উল্টে যায়। বাসে প্রায় ৫০ জন যাত্রী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী মদন ঘাটা, নয়ন হাজরাদের দাবি, সামনে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানকে সাইট দিতে গিয়ে চালক ভারসাম্য হারান এবং কাজ চলা রাস্তার খোঁড়া খাদে পড়ে গিয়ে বাসটি উল্টে যায়।
কলকাতা থেকে দিঘা
বাসটি কলকাতা থেকে দিঘা ঢুকছিল। যে-রাস্তায় তখন বাসটি ছিল সেখানে রাস্তার কাজ চলছিল। খোঁড়াখুঁড়ি ছিল। বাসটি একটি পিকআপ ভ্যানকে পাশ দিচ্ছিল। ভ্যানটিকে পাশ দিতে গিয়ে রাস্তার কাজের যে খুঁড়তে গিয়ে ওখানে যে খাদের মতো তৈরি হয়েছে সেই খাদে উল্টে পড়ে বাসটি। তড়িঘড়ি দিঘা কোস্টাল থানায় ফোন করা হয়। পুলিস পৌঁছয়। এগিয়ে আসেন স্থানীয় ক্লাবের যুবকেরা। সকলে মিলে যাত্রীদের তড়িঘড়ি উদ্ধার করে। ঘটনার পরই স্থানীয় ক্লাবের যুবকেরা ও দিঘা কোস্টাল থানার ওসি প্রবীর সাহা পুলিস বাহিনী নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে নামেন। আহতদের উদ্ধার করে তড়িঘড়ি দীঘা রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর গুরুতর তিনজনকে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
কেন দুর্ঘটনা?
রাস্তায় যে কাজ চলছে,সেখানে পাশে কোনও ব্যারিকেড দেওয়া নেই। নেই সতর্কতামূলক কোনও ব্যবস্থাও। সেই কারণেই এমন দুর্ঘটনা বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, এর আগেও বেশ কয়েকবার পর্যটকদের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার কাজের ঠিকাদার ও কর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগও তোলা হচ্ছে।
চাপান-উতোর
স্থানীয় বাসিন্দা গুরুপদ হালদার, রাজেশ কুন্ডুদের অভিযোগ, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার মেরামতির কাজ চলছে। কিন্তু ঠিকাদারি সংস্থা কোনও সুরক্ষাবেষ্টনী, সতর্কীকরণ বোর্ড বা ব্যারিকেড বসায়নি। ফলে পর্যটকদের গাড়ি ও স্থানীয় যানবাহন নিয়মিত বিপদের মুখে পড়ছে। এর আগেও একই এলাকায় একাধিকবার ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের ক্ষোভ, পর্যটন মরসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক দীঘায় আসেন। অথচ প্রশাসন বা ঠিকাদারি সংস্থা কোনও স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে অবহেলা চলতে থাকলে বড় বিপদ অনিবার্য, মন্তব্য এক স্থানীয় বাসিন্দার। দীঘা থানার ওসি, প্রবীর সাহা জানিয়েছেন ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। বাসটিকে ক্রেন দিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর ঠিকাদারি সংস্থার এক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। দীঘার পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, রাস্তা সংস্কারের কাজ প্রয়োজনীয় হলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করা দরকার। বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটলে দীঘার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। দুর্ঘটনা ঘিরে এখন তীব্র আলোড়ন দীঘা ও ঘেরসাই এলাকায়। স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, ভবিষ্যতে রাস্তার পাশে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।