অর্ণব দাস, বারাকপুর: এনআরসির আতঙ্কে আগরপাড়ায় প্রৌঢ়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে পানিহাটিতে প্রতিবাদ মিছিল তৃণমূলের। শোকগ্রস্ত হৃদয়ে হাজার হাজার মানুষের পা মেলালেন। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক, স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ, পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে-সহ শাসক দলের প্রথম সারির নেতারা। এদিন বিকেলে আগরপাড়া স্টেশন চত্বর মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় বিটি রোড সংলগ্ন তেঁতুলতলা মোড়ে।
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবার ‘সারা বাংলার একটাই স্বর, জাস্টিস ফর প্রদীপ কর’ স্লোগানে গর্জে উঠল পানিহাটি। মিছিল শেষের পর পার্থ ভৌমিক বলেন, “মর্মান্তিক একটা ঘটনা। প্রদীপ করের পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। নিহতের পরিবারের পাশে ইতিমধ্যে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।” তিনি আরও বলেন, “অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বুধবার নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসে এলাকার লোকজনের কাছে প্রতিবাদ জানাতে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই এদিন এলাকাবাসী প্রতিবাদে নেমেছে। আমরাও তাতে সামিল হয়েছি। এটুকুই বলব, আমরা প্রদীপ করের পরিবারের পাশে সব সময় আছি।”
উল্লেখ্য, এসআইআর ঘোষণার পর এনআরসি আতঙ্কে আত্মঘাতী হন পানিহাটি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আগরপাড়ার ৪ নম্বর মহাজাতি নগরে বাসিন্দা বছর সাতান্নত প্রদীপ কর। অভিযোগ, সোমবার এসআইআর ঘোষণার পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রৌঢ়। মঙ্গলবার সকালে নিজের ঘর থেকে উদ্ধার হয় প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ। একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়। তাতে এনআরসির কথা উল্লেখ রয়েছে বলেই জানান পরিচিতরা।
এনিয়ে মৃতের ভাতৃবধূ মৌসুমী খড়দহ থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, ‘প্রদীপ কর বেশ কিছুদিন ধরে এনআরসি’র আতঙ্কে ভুগছিলেন। গতকাল এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর উনি ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েন। পুলিশ যেখান থেকে প্রদীপ করকে উদ্ধার করে, সেখানে সুইসাইড নোট পায়। তাতে প্রদীপ কর মৃত্যুর কারণ হিসাবে এনআরসি’র কথা লিখেছেন। আমরা এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের এনআরসি’র নামের আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করাকেই দায়ী বলে মনে করি।”
এই অভিযোগ পত্রে সুইসাইড নোট প্রদীপের হাতের লেখা উল্লেখ্য থাকায় অনেকটাই ধোঁয়াশা কেটেছে। পাশাপাশি একটি সুইসাইড নোটও প্রকাশ্যে এসেছে। সেটা প্রদীপ করের লিখে যাওয়া শেষ বার্তা বলেই দাবি করা হচ্ছে। (যদিও এর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন।) প্রকাশ্যে আসা ওই নোটের হাতের লেখা খুব একটা স্পষ্ট নয়, খানিকটা কাঁচা। তবে, তাতে প্রদীপের নাম, পরিচয়, জন্মের সাল-সহ এনআরসি-র কথা উল্লেখ রয়েছে। এনিয়ে বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলিধর শর্মা জানিয়েছেন, “স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে সুইসাইড নোট ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে। মৃত ব্যক্তি পরিচিত কার কার সঙ্গে এনআরসি বা এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”