• মোদি সরকারের শ্রম শক্তি নীতির ‘অনুপ্রেরণা’ মনুস্মৃতি, তুঙ্গে বিতর্ক, শুরু রাজনৈতিক তরজা
    বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। সমাজে বর্ণপ্রথার হোতা মনুস্মৃতি। সেই মনুস্মৃতিই কেন্দ্রের মোদি সরকারের খসড়া শ্রম শক্তি নীতি, ২০২৫-এর ‘অনুপ্রেরণা’। এক্ষেত্রে শ্রমদান নিছকই কোনও কর্তব্য বা দায়িত্ব পালন নয়। বরং তা অনেক বেশি ‘রাজধর্ম’। এমনই উল্লেখ করা হয়েছে শ্রমমন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট খসড়া রিপোর্টে। জোর দেওয়া হয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের ‘ধর্ম’ পালনের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি এসংক্রান্ত খসড়া নীতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতেই এই বিষয়টি সামনে এসেছে। আর সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবিষয়ে রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলিও অবিলম্বে এই শ্রম শক্তি নীতি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

    তাদের অভিযোগ, শ্রমিক-কর্মচারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই খসড়া নীতি প্রকাশ করেছে মোদি সরকার। এর ফলে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রই নষ্ট করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। এব্যাপারে মোদি সরকারকে তুলোধনা করেছে কংগ্রেস। দলের সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, ‘সংবিধান থেকে নয়। বরং মনুস্মৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে খসড়া নীতি প্রকাশ করছে কেন্দ্র। যা অত্যন্ত আপত্তিজনক। এটি মোদি সরকারের সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর যখন দেশের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল, তখনও সঙ্ঘ পরিবার এর বিরোধিতায় শামিল হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটি দেশের সংবিধান নয়। কারণ তা মনুস্মৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়নি। মোদি এবং আরএসএস আলাদা নয়। তাই মনুস্মৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই শ্রম শক্তি নীতির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। মোদি সরকারের আমলে প্রতিদিন সংবিধানকে অবহেলা করা হচ্ছে।’

    উল্লিখিত খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে, সমাজ গঠনের জন্য প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারীর অবদান রয়েছে। তিনি শিল্পী হতে পারেন, কৃষক হতে পারেন, অথবা শিক্ষক, শ্রমিক যে কেউই হতে পারেন। মনুস্মৃতি, যজ্ঞবল্কস্মৃতি, নারদস্মৃতি, শুক্রনীতি এবং অর্থশাস্ত্রের মতো প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন বিষয় রাজধর্মের মাধ্যমে এহেন চিন্তাভাবনারই কথা বলে। এ প্রসঙ্গেই খসড়া শ্রম শক্তি নীতি, ২০২৫-এ উল্লেখ করা হয়েছে, একটি আধুনিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে এহেন নীতি প্রাচীন ভারতের নজরকাড়া রূপরেখা থেকেই অনুপ্রাণিত। সেইমতোই প্রাচীন ভারতের চিন্তাধারাকে খসড়া শ্রম শক্তি নীতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার, শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষা, নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, সংবিধানকে এড়িয়ে এহেন বিষয়ভাবনার কারণেই বিতর্ক তুমুল হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)