• সোনার বাংলা গেয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী! অসমে হিমন্তর কোপে কংগ্রেস
    বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • বিশেষ সংবাদদাতা, গুয়াহাটি: বিজেপির মডেল রাজ্যে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়াও এখন রাষ্ট্রদ্রোহ! ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ গত সোমবার অসমের শ্রীভূমি জেলায় দলীয় বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় এই রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলেন এক বাঙালি কংগ্রেস নেতা। বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায়, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ওই জেলায় যা স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কিন্তু সেই ‘অপরাধে’ বিধুভূষণ দাস নামে ৮০ বছর বয়সি ওই প্রবীণকে ‘দেশদ্রোহী’র তকমা দিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। কারণ, কবিগুরুর লেখা এই গানটিরই প্রথম দশ লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত! আর সেই জন্যই বুধবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে বিধুভূষণ দাস সহ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পুলিশকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালও জানিয়েছেন, বুধবারই সদর থানায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার রেশ প্রতিবেশী রজ্যের সীমানা পেরিয়ে আছড়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে রবীন্দ্র অনুরাগী মহলে।

    অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও গেরুয়া শিবিরের মুণ্ডপাত করেছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ গৌরব গগৈয়ের তোপ, ‘বিজেপি বরাবরই বাঙালি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অপমান করে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটি বাঙালিকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস জুগিয়েছিল। সেই ইতিহাসই জানা নেই বিজেপির। বিজেপি যে বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও রবীন্দ্রনাথের দর্শনকে অবজ্ঞা করে, সাম্প্রতিক পদক্ষেপে সেটা ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষী মানুষ বুঝে ফেলেছে, বিজেপি শুধুমাত্র ভোটের প্রয়োজনে তাঁদের ব্যবহার করে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সুর চড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। তিনি লিখেছেন, ‘এই গানটির সঙ্গে সব বাঙালির আবেগ জড়িয়ে। গেরুয়া চাড্ডি ও তাদের টাকায় চলা ট্রোল মিডিয়ার পক্ষে কোনওদিন তা বোঝাই সম্ভব নয়।’

    বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ১৯০৫ সালে গানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরবর্তীকালে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে এই গানটিই জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। ভারতীয় বাঙালিদের কাছেও এই রবীন্দ্রসংগীত সমান জনপ্রিয়। যদিও সেই গান গাওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সমালোচনা শুরু করে দেয় বিজেপি। সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাংলাদেশের মধ্যে দেখানো একটি মানচিত্র পাকিস্তানি এক সেনা শীর্ষকর্তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ওপারের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। সেই প্রেক্ষিতেই বুধবার হিমন্ত বলেন, ‘শ্রীভূমি জেলায় ভারতের বদলে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের নাগরিক ও আমাদের জাতীয় সংগীতের অসম্মান হয়েছে। বহু বাংলাদেশি নাগরিককেই দাবি করতে দেখা যায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল একদিন বাংলাদেশের অংশ হবে। কংগ্রেস জেলা কমিটির বৈঠকে যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়েছে, তার ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিছিন্ন করার সেই ভাবনাকেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি। দেশবিরোধী এধরনের আচরণকে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এবিষয়ে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রীভূমির জেলা কংগ্রেস কমিটির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ধারায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি অসম পুলিশকে।
  • Link to this news (বর্তমান)