নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: জগন্মাতা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা ঘিরে কৃষ্ণনগরে তুমুল উন্মাদনা। জনজোয়ার। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দর্শনার্থীদের ভিড়ে কার্যত অবরুদ্ধ হল কৃষ্ণনগর শহর। বৃহস্পতিবার নবমীর সকাল থেকেই পুজো মণ্ডপগুলিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। যদিও এদিন অধিকাংশই বেড়িয়েছিলেন পুষ্পাঞ্জলি দিতে। কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যশালী চাষাপাড়া বারোয়ারির বুড়িমার পুষ্পাঞ্জলিতে এদিন লম্বা লাইন চোখে পড়ে। মন্দির চত্বরে সকাল থেকেই কার্যত পা রাখার জায়গা ছিল না। ভক্তদের সমাগম সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ, প্রশাসনকে। তবে পুজোর উন্মাদনায় খানিক বিঘ্ন ঘটায় বৃষ্টি। এদিন দুপুর থেকেই কৃষ্ণনগর শহরে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। যার ফলে শহরে উৎসবে আমেজের খানিক তাল কাটে। কিন্তু বিকেল হতেই অন্য ছবি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিকেল থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নামে মণ্ডপে মণ্ডপে। পুজো কমিটির তরফ থেকেও মণ্ডপ চত্বরে বিভিন্ন কনসার্টের আয়োজন হয় এদিন।
কৃষ্ণনগর শহরে একদিনই জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। সারাদিন ধরে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পুজো চলে। বলা যায়, মাইকে দেবীর মন্ত্র উচ্চারণের সঙ্গেই এই উৎসবের মরশুমে ঘুম ভাঙে কৃষ্ণনগর শহরের। সেইমতো শহরের বাসিন্দারা এদিন বিভিন্ন মণ্ডপে সকাল থেকেই পুজো দিতে চলে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই সপ্তমী পুজোয় মণ্ডপগুলিতে ভিড় কম থাকলেও, অষ্টমী ও নবমীর পুজোয় ভক্তদের ভিড় বেশি ছিল। বেলা যত গড়িয়েছে কৃষ্ণনগর শহরের পুজো মণ্ডপগুলিতে উপচে পড়েছে ভক্তদের ভিড়।
বেলার দিকে চাষাপাড়া বারোয়ারি বুড়িমার পুষ্পাঞ্জলির লাইন কৃষ্ণনগর পুরসভা মোড় পার করে ট্রাফিক অফিস ছাড়িয়ে যায়। এদিন সকালে গোলাপটি বারোয়ারি, মালোপাড়া বারোয়ারি, বাঘাডাঙা বারোয়ারি, কলেজ স্ট্রীট বারোয়ারি পুজোগুলিতে পুষ্পাঞ্জলির ভিড় দেখা গিয়েছে। একইসঙ্গে কাঁঠালপাতা বারোয়ারির ছোটমার পুষ্পাঞ্জলি দিতেও মন্দির চত্বর ভক্তদের ভিড় উপচে পড়া ছিল।
তবে বৃহস্পতিবার সারাদিন দর্শনার্থীদের স্রোতের অভিমুখ ছিল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দিকে। অঞ্জলি দিতে না পারলেও প্রতিমা দর্শন করতে বহু মানুষ ভিড় করেন রাজবাড়িতে। ফলে কৃষ্ণনগরের চৌরাস্তা ও আমিনবাজার বারোয়ারির কাছে ব্যাপক যানজট দেখা যায়। তবে এবার গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় দর্শনার্থীরা রাজবাড়ি ঢোকার সরু রাস্তাতেই গাড়ি রাখেন। ফলে রাজবাড়ি ঢোকার রাস্তায় বাইক আরোহী, দর্শনার্থীদের চাপে কার্যত পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুপুরের দিকে মালোপাড়া বারোয়ারির ধুনো পোড়ানো দেখতেও মন্দির চত্বরে ভিড় উপচে পড়ে।
তবে এদিন বেলা দু’টো থেকে কৃষ্ণনগর শহরে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। যা উৎসবের আমেজে খানিক বিঘ্ন ঘটায়। তবে সন্ধ্যার সময় থেকেই বৃষ্টি কমলে রাজপথে কালো মাথার ভিড় দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে মণ্ডপগুলিতে ঢাক, তাসা ও মাদলের আওয়াজে সব মিলিয়ে নবমীর সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর শহর এক আলাদা রুপ পায়। শহরের পাশাপাশি বাইরের থেকেও কাতারে কাতারে মানুষ কৃষ্ণনগরের শ্রেষ্ঠ উৎসবে শামিল হন। বিশেষ করে বউবাজার, মোংলাপাড়া, উকিলপাড়া, হাইস্ট্রীট চত্বর, হাতালপাড়া, চকেরপাড়া এলাকায় কার্যত জনজোয়ার দেখ যায়।
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সুদীপ দাস বলেন, আমরা কৃষ্ণনগরবাসী এই জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি। কিন্তু এদিন দুপুরের দিকে যেভাবে দফায় দফায় বৃষ্টি হলো, তাতে আমরা ভেবেছিলাম উৎসবের আনন্দটাই হয়তো মাটি হবে। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি ভালো হয়েছে।