• নদীর উপরেই বসতবাটি, কৃষিজমি! জলঙ্গি নিয়ে তেহট্টে নিশ্চুপ প্রশাসন
    বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, করিমপুর: জলঙ্গি নদী বাঁচাতে প্রশাসনের তরফে শোনানো হয়েছে নানান পরিকল্পনার কথা। তৈরি হয়েছে জলঙ্গি বাঁচাও কমিটি। প্রত্যেক ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি মেলে যেভাবেই হোক জলঙ্গিকে বাঁচাতেই হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই ধীরে ধীরে মজে যাচ্ছে করিমপুরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া জলঙ্গি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এইজলঙ্গি নদীর উপর একসময় এলাকার কৃষি নির্ভর করত। এখন করিমপুরেরসেই নদীই কৃষিজমিতে পরিণত হয়েছে! কোনও নিয়ম, নীতির তোয়াক্কা না করে  নদীর বুকেই তৈরি হয়েছে বসতবাড়ি। তেহট্ট মহকুমার বিভিন্ন জায়গায়বেআইনি ভাবে গজিয়ে ওঠা অজস্র ইটভাটার জন্য নদীর মাটি কেটে নিচ্ছে মাটিমাফিয়ারা। অথচ এই ব্যাপারে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতির নেতারা সবাই নিশ্চুপ।

    করিমপুরে বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারেও রাজনৈতিক দলগুলির বড় করে জলঙ্গিরসংস্কারের কথা বলে। কিন্তু তারপরেও কোনও সমাধান হয়নি সমস্যার। জানা গিয়েছে, তিনদশক আগেও করিমপুরে জলঙ্গি নদীতে বছরভর জল থাকত। সেচের জল কিংবা মাছনিয়ে ভাবতে হত না কৃষিজীবী ও মৎসজীবীদের। নদীপথে বড়, বড় নৌকায় কোলকাতাথেকে জিনিসপত্র আসত এবং এখান থেকেও বিভিন্ন মালপত্র যেত। বিজয়া দশমীতেকরিমপুরে জলঙ্গির উপরে নৌকা বাইচ আজও এলাকার মানুষের স্মৃতি থেকে মুছেযায়নি। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক কিছু কারণের পাশাপাশি নদীর উপর মানুষের ক্রমাগতঅত্যাচারের ফলে জলঙ্গির সেই আগের অবস্থা এখন নেই। 

    করিমপুরের এক বৃদ্ধবিপদ মণ্ডল বলেন, যার যেখানে যেমন ক্ষমতা তেমন ভাবেই চুরি হয়েযাচ্ছে নদী। করিমপুর এলাকাতেই কোথাও নদীর উপরে মাটি ফেলে রাস্তা হয়েছে।মুর্শিদাবাদের কাছে চরমধুবনায় পদ্মা নদী থেকে জলঙ্গি নদীর সৃষ্টি। বহুদিন আগে জলঙ্গির সেই উৎসমুখও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উৎসমুখ থেকে করিমপুর ২ব্লকের চরমোক্তারপুর পর্যন্ত জলঙ্গি কার্যত হারিয়ে গিয়েছে। এই চরমোক্তারপুরএলাকায় ভৈরব ও জলঙ্গি মিলিত হয়েছে। এখান থেকে স্বরূপগঞ্জে ভাগীরথী নদীতেমেশা পর্যন্ত প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার নদীর গতিপথ কিছুটা হলেও এখনও বেঁচে আছে। 

    ‘সেভজলঙ্গি’-র সম্পাদক শঙ্খশুভ চক্রবর্তী বলেন,আমাদের দেশে কোনও নদী মন্ত্রী নেই। দেশে নদীর উপরে যে ভাবে অত্যাচারহয়, বিশ্বের কোনও সভ্য দেশে সেটা হয় না। বর্ষার সময় এই নদীগুলোই অতিরিক্তজল বহন করে বন্যার হাত থেকে জনপদকে বাঁচায়। নদী নিয়ে যদি আমরা এখনও সচেতননা হই, তাহলে ভবিষ্যতে ফল কিন্তু মারাত্মক হবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)