দুর্গাপুর গণধর্ষণে ২০ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ করে নজির পুলিশের
বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল ও সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: সাড়ে ৮০০ পাতার নথি! অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, শ্লীলতাহানি, অপহরণ সহ মোট আঠারোটি ধারা প্রয়োগ। চার্জশিটে নাম রয়েছে ডাক্তারি পড়ুয়ার সহপাঠীরও। মাত্র ২০ দিনের মাথায়, বৃহস্পতিবার ডাক্তারি পড়ুয়া গণধর্ষণ মামলায় দুর্গাপুরের এসিজেএম শুভ্রকান্তি ধরেরর এজলাসে চার্জশিট দাখিল করে নজির গড়ল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। বিচারক চার্জশিট গ্রহণযোগ্যতায় আনেন। মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের মতে, এহেন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এত কম সময়ে চার্জশিট পেশ করা একটা দৃষ্টান্ত। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী দু’মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে বিচার প্রক্রিয়া। আজ, শুক্রবার মামলার শুনানি। অভিযুক্তদের এজলাসে এনে তাদের আইনজীবীদের হাতে চার্জশিটের ফটোকপি তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর রাতে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। কলেজ লাগোয়া পরাণগঞ্জ জঙ্গলে সহপাঠীর সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই দুষ্কৃতীদের লালসার শিকার হন। তোলপাড় পড়ে গোটা রাজ্যে। ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে পদ্মপার্টি। অতি তৎপরতা দেখায় ওড়িশার বিজেপি সরকারও। কেননা, ছাত্রীটির বাড়ি সে রাজ্যে। নির্যাতিতার বাবা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখে দ্রুত বিচার পাওয়ার আর্জি রাখেন। সবমিলিয়ে পুলিশ বেশ চাপেই ছিল। কিন্তু, মাত্র ২০ দিনে সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে, তদন্তের কাজ প্রায় শেষ করে পুলিশ যেভাবে চার্জশিট দাখিল করল, তা প্রশংসার দাবি রাখে। নির্যাতিতার বাবা ওড়িশা থেকে ফোনে বলেছেন, ‘আমরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি। আপনাদের মুখে চার্জশিটের বিষয়ে শুনলাম। এখনই কোনও মন্তব্য করব না।’
আদালত সূত্রে খবর, গণধর্ষণের ঘটনায় যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে মোট সাড়ে ৮০০ পাতার নথি তৈরি করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে ছয় অভিযুক্তের কার কী ভূমিকা ছিল, তা উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, শ্লীলতাহানি, অপহরণ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনএসের পৃথক পৃথক ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। টিআই প্যারেডে মূল অভিযুক্ত হিসেবে ফিরদৌস শেখকে শনাক্ত করেছিলেন নির্যাতিতা। ফিরদৌস সহ তিনজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ধারা দেওয়া হয়েছে। সহপাঠী ওয়াশিফ আলিকে ধর্ষণের ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। নির্যাতিতাও নিজের বয়ানে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে সহপাঠী ঘনিষ্ঠ হয়। পুলিশ প্রথম থেকেই সহপাঠীকে আতশ কাচের তলায় রেখেছিল। বাকি দুই অভিযুক্ত শেখ রিয়াজুদ্দিন ও সফিক শেখের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ধারা যোগ করা হয়েছে চার্জশিটে।
রাজ্য সরকারের নিযুক্ত মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তদন্তকারী অফিসার গৌতম বিশ্বাস সহ পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জেরেই মাত্র ২০ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ করা সম্ভব হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব, আগামী দু’মাসের মধ্যেই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দোষীদের শাস্তি দিতে। নির্যাতিতার আইনজীবী পার্থ ঘোষ বলেন, ‘এখনও চার্জশিট হাতে পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখব। আমিও চাই, দু’মাসের মধ্যে ট্রায়াল করিয়ে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি সুনিশ্চিত করতে।’