মেসবাড়িতে বেসরকারি কলেজের ফার্মাসি পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নলহাটির লোহাপুরে মেসবাড়ি থেকে বেসরকারি কলেজের ফার্মাসি পডুয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। মৃতের নাম প্রচেত পাঁজা(২২)। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে। মৃতের পরিবারের দাবি, ছেলের আত্মহত্যার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এনিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রচেত নলহাটির লোহাপুরের কাঁটাগড়িয়ায় একটি বেসরকারি ফার্মাসি কলেজে চতুর্থ বর্ষে পড়ছিলেন। কাঁটাগড়িয়ায় মেস বাড়ির একটি রুমে একাই থাকতেন। সহপাঠীদের সঙ্গেও সেভাবে কথা বলতেন না। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ফোন করলেও কল রিসিভ করেননি। এরপর বাড়ির মালিককে ফোন করেন তাঁর বাবা। বাড়ির মালিক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখেন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি জড়িয়ে ওই ছাত্র ঝুলছেন। খবর পেয়ে পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিকেলে পাঠায়। রাতে বেশ কয়েকজন পড়ুয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিন মর্গে এসে ছেলের মৃতদেহ দেখে বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী প্রণব পাঁজা। মৃতের মা মঞ্জু চৌধুরী পেশায় বালুরঘাট হাসপাতালের নার্স। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বামীকে ফোন করে ডেকে পাঠায়। সেই মতো বুধবার স্বামী কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে ছেলেকেও ডাকা হয়। সেখানে কর্তৃপক্ষ স্বামীকে জানায়, ছেলে ক্লাস করে না। সেমেস্টার পরীক্ষা দেয়নি। সেই সঙ্গে ছেলেকে নেশারু, ক্রিমিন্যাল সহ অকথ্য কথাবার্তা বলে। কিন্তু, আমার ছেলে নেশা করে না। কাউকে একটা চড়ও মারেনি। স্বভাবতই এমন কথায় ছেলের আঘাত লাগে। মনমরা হয়ে বেরিয়ে আসে। পরে স্বামীও বাড়ি চলে আসে। সন্ধ্যায় স্বামীর মুখ থেকে শুনে ছেলেকে যখন ফোন করছি তখন দেখছি রিং বেজে গেলেও কল রিসিভ করছে না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করা পর বাড়ির মালিককে দেখতে বলি। তারপরই ছেলের আত্মহত্যার খবর পাই। ওর মৃত্যুর জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী। তিনি আরও বলেন, ছেলে খুব চাপে ছিল। কিন্তু, কেন সে চাপে ছিল, পরীক্ষা কেন দিল না, তা ভেবে পাচ্ছি না। ছেলে পড়াশোনায় ভালো ছিল। ছেলে ভাশুরের মেয়েকে প্রায়ই ফোন করে বলত বন্ধুরা র্যাগিং করে। কিন্তু, কী কারণে ও এমন করল বুঝতে পারছি না। মৃতের মেসোমশাই দেবাশিস অধিকারী বলেন, ছাত্র ভুল করলে শিক্ষকরা বকাঝকা করতে পারেন। কিন্তু, যতক্ষণ না পর্যন্ত আদালত দোষী সাব্যস্ত করছে, ততক্ষণ কাউকে ক্রিমিন্যাল বলা যায় না। কর্তৃপক্ষের অকথ্য ভাষার জন্যই আজ চিরতরে চলে গেল আমাদের ছেলে।কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুজিবর রহমান বলেন, ওই ছাত্র পড়াশোনায় ভালো ছিল। তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত ভালো ফল করেছে। কিন্তু, ফাইনাল বর্ষে এসে সে নিয়মিত কলেজ করত না।