নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: সামনেই নভেম্বর মাস মানে সেটা ধান কাটার মরশুম। কিন্তু এর মধ্যেই মেদিনীপুরে হাতির তাণ্ডবের জেরে বিঘার পর বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃহস্পতিবার রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কের উপর মালবাঁদি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এদিন বেশ কিছু সময় ধরে রাস্তা অবরোধ থাকায় সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে একাধিক বাস, পণ্যবাহী গাড়ি ও বাইক। এদিকে, শুধু মেদিনীপুর ডিভিশন এলাকায় ৬৯টি হাতি ও রূপনারায়ণ ডিভিশনে ৫টি হাতি রয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত ক’দিনে একশো বিঘার বেশি জমির ক্ষতি হয়েছে হাতির দাপাদাপিতে। হুলা পার্টির দল হাতি তাড়িয়ে মালবাঁদি এলাকায় নিয়ে আসছে। রাতের অন্ধকারে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে হাতি চাষের জমিতে নেমে পড়ছে। একইসঙ্গে খাবার না খেলেও, যে জমির উপর দিয়ে যাচ্ছে, সেই জমির ফসলের দফারফা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বন দপ্তর কোনও পদক্ষেপ করছে না।
এদিন চাঁদড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তারকনাথ বেরা বলেন, এখন আর হাতি আসার নির্দিষ্ট কোনও সময় থাকছে না। কষ্ট করে জমিতে ফসল ফলাচ্ছেন চাষিরা। কিন্তু হাতির দল জমিতে ঢুকলে নিমেষে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাতির ভয়ে অনেক চাষি ধান উৎপাদন করা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেকারণেই গ্রামবাসীরা পথ অবরোধ করেছিলেন। পরে বনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর অবরোধ ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেশিরভাগ মানুষ চাষের উপরই নির্ভরশীল। এই জেলায় লক্ষাধিক বিঘা চাষের জমিতে ধান হয়। সেই ধান বিক্রি করেই সংসার চালান গ্রামবাসীরা। এছাড়া বহু মানুষ জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু তাতেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে হাতি। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর বনবিভাগের চাঁদড়া, আরাবাড়ী, পিড়াকাটা সহ একাধিক এলাকায় দলছুট হাতি ঢুকে পড়েছে।
বন বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, বনকর্মীদের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে বিপুল সংখ্যক হাতির অনুপাতে বনকর্মী নেই। এছাড়া হাতিগুলি ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, অনেকেই আবার জঙ্গলপথে হাতিকে বিরক্ত করছে। এর ফলে হাতি নিজের স্বভাব বদলে ফেলছে। এক গ্রামবাসী বলেন, হাতি গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্টের পর বনকর্মীরা দেখতে আসেন। যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, সেই পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি পান না চাষিরা। বনকর্মীদের কাজের অনেক গাফিলতি রয়েছে।-নিজস্ব চিত্র