১২ বিঘা জমি দান করলেও এখনও গড়ে ওঠেনি সরকারি ডিগ্রি কলেজ, দ্রুত পদক্ষেপের দাবি কাঁকসা ব্লক এলাকার বাসিন্দাদের
বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, মানকর: কাঁকসা ব্লকে নেই সরকারি ডিগ্রি কলেজ। ফলে ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত এলাকার একশোরও বেশি গ্রামের পড়ুয়াদের উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে পড়াশোনার জন্য যেতে হচ্ছে মানকর, গলসি, দুর্গাপুর, বোলপুর অথবা বর্ধমানে। অথচ ডিগ্রি কলেজের দাবি জানিয়ে ব্লকের মলানদিঘি পঞ্চায়েতের কুলডিহায় প্রায় চল্লিশ বছর আগে ১২ বিঘা জমি দান করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, দূরের কলেজে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা, অতিরিক্ত আর্থিক খরচের কারণে অনেক পড়ুয়াই স্কুলের পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ পড়ে থাকা জমির ব্যবহার হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ব্লকে কলেজ হোক এটা দীর্ঘদিনের চাহিদা। আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী।
জানা গিয়েছে, এই ব্লকে ৭০টিরও বেশি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, একশোর উপরে প্রাথমিক স্কুল, ৬টি জুনিয়ার হাইস্কুল ও ১২টি হাইস্কুল রয়েছে। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ম্যানেজমেন্ট কলেজ, ল কলেজও আছে ব্লকে। কিন্তু ডিগ্রি কলেজ না থাকায় স্কুলের গণ্ডী পেরোনোর পর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের। কুলডিহা এলাকার বাসিন্দারা জানান, কাঁকসায় ডিগ্রি কলেজ তৈরির দাবি জানিয়ে বহুবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অথচ এই এলাকা থেকে দুর্গাপুরের দূরত্ব প্রায় কুড়ি কিলোমিটার, মানকর কলেজের দূরত্ব ত্রিশ কিলোমিটার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় চল্লিশ বছর আগে কুলডিহার বাসিন্দারা এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রাইমারি স্কুল শিক্ষা বোর্ডকে ১২ বিঘা জমি দান করেছিলেন। তার মধ্যে চার বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে একটি জুনিয়র হাইস্কুল। বাকি আট বিঘা জমি এখনও পড়ে রয়েছে। এই জমিতেই কলেজ গড়ার জন্য আবেদন করেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু যেহেতু এটি স্কুল বোর্ডের জমি তাই কলেজ গড়তে নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। এলাকার শিক্ষাব্রতী বরুণ ঘোষাল বলেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিয়েছে। এখানে কলেজ গড়ার জন্য পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক থেকে শুরু করে মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছেও আবেদন করেছি। ওনারা শিক্ষা দপ্তরে জানিয়েছেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু এখনও কলেজ গড়ার বিষয়ে সেভাবে পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় কলেজ হলে ব্লক জুড়ে শিক্ষার প্রসার ঘটবে। স্থানীয়রা জানান, দিশম আদিবাসী জুমিদ গাঁওতা সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সদর্থক উত্তর মেলেনি। শুধু তাই নয় কলেজ গড়ার দাবি নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোও হয়েছিল। এমনকি রাজ্যে পালা বদলের পর কুলডিহার বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলেজ গড়ার আবেদন করে চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও কলেজ গড়ে ওঠেনি। পশ্চিম বর্ধমান জেলার উচ্চমাধ্যমিকের জয়েন্ট কনভেনার তথা দুর্গাপুরের নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কলিমুল হক বলেন, ওই এলাকায় কলেজ হলে বহু পড়ুয়ার উপকার হবে। মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা চাই এখানে কলেজ হোক। ডিগ্রী কলেজ না থাকার জন্য আদিবাসী ও সাধারণ পড়ুয়াদের পড়াশোনাতে প্রভাব পড়ে। কলেজ গড়ার কাজে পঞ্চায়েত সমস্ত রকমভাবে এগিয়ে আসবে।