কাগজে নাম আছে, ওয়েবসাইটে নেই! ২০০২ সালের প্রামাণ্য ভোটার তালিকা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের
বর্তমান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল!—সুকুমার রায়ের জন্মবার্ষিকীতে এর থেকে ভালো উপমা আর কিছুই হতে পারে না। তবে প্রসঙ্গটা ‘হ য ব র ল’ সংক্রান্ত নয়, বরং চূড়ান্ত রাজনৈতিক—এসআইআর। ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে পশ্চিমবঙ্গে প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য করছে নির্বাচন কমিশন। তাতে নাম থাকলে কোনও নথি আর ভোটারকে জমা করতে হবে না। তৃণমূলের বিস্ফোরক অভিযোগ, সেই সময়ের কাগুজে নথি বা ‘হার্ড কপি’র সঙ্গে কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়া ‘ডকুমেন্ট’ মিলছে না। অর্থাৎ, হার্ড কপিতে দেখা যাচ্ছে ভোটারের নাম। অথচ ওয়েবসাইটে নেই। ৭১৭ জন ভোটার সংখ্যা হঠাৎ নেমে এসেছে ১৪০’এ। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নেই। দেখা গিয়েছে, একটি বুথে ভোটার সংখ্যা শূন্য। হার্ড কপির সঙ্গে ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়া সফট কপির ফারাক বিস্তর বলেই দাবি করেছে তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কমিশন সেই অভিযোগ দিল্লিকে জানিয়েছে।
এসআইআর’কে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আখ্যা দিয়েছেন, ‘সাইলেন্ট ইনভিজিবল রিগিং’। অর্থাৎ, চুপিচুপি ভোটে কারচুপি। এই কারচুপিটা কোথায় হয়েছে? সেই অভিযোগের পক্ষে সোমবার বেশ কিছু তথ্য হাজির করেছে বাংলার শাসক দল। এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও কুণাল ঘোষ একযোগে কোচবিহার থেকে অশোকনগর পর্যন্ত ভোটার তালিকায় কারচুপির তথ্য সামনে আনেন। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক বুথে ভোটারদের নাম মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে।
কোচবিহার জেলার নাটাবাড়ি বিধানসভার ২ নম্বর বুথ। সেখানে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নাম ছিল ৭১৭ জনের। নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে ওই বছরের ভোটার তালিকা আপলোড করার পর দেখা যাচ্ছে, ওই বুথে ভোটার সংখ্যা ১৪০। ৭১৭ থেকে ১৪০ জন কীভাবে হল? সেটাই প্রশ্ন তৃণমূলের। আরও অভিযোগ, মাথাভাঙা বিধানসভার ১৬০ নম্বর বুথে ২০০২ সালে ভোটার ছিলেন ৮৪৬ জন। কিন্তু এখন ২/২৪৪ নম্বর বুথের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রয়েছেন ৪১৬ জন। সিরিয়াল নম্বর ৪১৭ থেকে ৮৪১ পর্যন্ত ভোটার উধাও। তাঁদের কোনও তথ্য নেই ওয়েবসাইটে।
তৃণমূলের তরফে মারাত্মক অভিযোগ আনা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর বিধানসভার ভোটার তালিকা নিয়েও। অশোকনগরের ১৫৯ নম্বর বুথে ভোটারদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই নেই কমিশনের ওয়েবসাইটে। একইসঙ্গে অশোকনগরের ৬১ নম্বর বুথে সিরিয়াল নম্বর ৩৪৩ থেকে ৪১৪ সংক্রান্ত ভোটারের খোঁজ কমিশনের ওয়েবসাইটের সফট কপিতে নেই। গোটা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরডাবরি এলাকার বিএলওর বাবা, মা, ভাইয়ের নামও ভোটার তালিকায় নাম নেই।
এই সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যমরাজের দপ্তরে পরিণত। আমাদের আশঙ্কা, বিজেপি পার্টি অফিসের কথা মতো নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কাজে নেমে পড়েছে।’ পাল্টা বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ‘তৃণমূল জাল ভোটার তালিকা তৈরি করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।’