• দূষণের গ্রাসে দিল্লি, সামনে এল নতুন ভাইরাসের কীর্তি
    আজকাল | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি-এনসিআরের ধোঁয়াটে আকাশ শুধু শহরের স্কাইলাইন ঢেকে দিচ্ছে না, বরং এখানকার বাসিন্দাদের ফুসফুসকেও শ্বাসরোধ করছে। সম্প্রতি কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম লোকালসার্কেলস পরিচালিত এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। এই অঞ্চলের প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে তিনটিতে অন্তত একজন অসুস্থ, যার মূল কারণ হচ্ছে দূষিত বাতাস ও মৌসুমি ভাইরাসের যৌথ প্রভাব। ফলে রাজধানী কার্যত এক ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে।

    এই সমীক্ষায় দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা, ফারিদাবাদ এবং গাজিয়াবাদের ১৫,০০০-রও বেশি নাগরিকের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলাফল বলছে, গত এক মাসে অসুস্থতার হার বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষে যেখানে ৫৬% পরিবারের একজন বা একাধিক সদস্য অসুস্থ ছিলেন, বর্তমানে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫%-এ।

    রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তাররা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্লান্তির মতো উপসর্গ এখন প্রতিটি পরিবারের পরিচিত সমস্যা চিকিৎসকদের মতে, রোগীদের আরোগ্য হতে এখন ১০ দিনেরও বেশি সময় লাগছে, বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ ও পূর্ববর্তী শারীরিক অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক।

    উৎসবের আমেজ ফুরোতেই দিল্লির আকাশ ফের মৃত্যুবাহী ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) টানা কয়েকদিন ধরে ৪০০ থেকে ৫০০-এর মধ্যে ঘুরছে, যা “গুরুতর” পর্যায়ের। আতসবাজির ধোঁয়া, পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির পরিত্যক্ত ফসল পোড়ানো, গাড়ির ধোঁয়া এবং নির্মাণকাজের ধুলা মিলে বাতাসকে এক মারাত্মক বিষমিশ্রণে পরিণত করেছে।

    PM2.5 স্তর বর্তমানে প্রতি ঘনমিটারে ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ সীমার প্রায় দশগুণ বেশি। লোকালসার্কেলস-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চারটি পরিবারের তিনটিতে শ্বাসকষ্ট, কাশি, গলা জ্বালা, নাক বন্ধ, চোখে জ্বালা, মাথাব্যথা প্রভৃতি দূষণ-জনিত উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, “দিল্লির বাসিন্দারা এক দ্বিমুখী বিপদের মধ্যে পড়েছেন। ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে এমন সময়ে মারাত্মক বায়ুদূষণও আঘাত হেনেছে। ফলে রোগীদের আরোগ্য প্রক্রিয়া ধীর হচ্ছে এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।”

    বায়ুদূষণ ও ভাইরাল সংক্রমণ একসাথে চলায় নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কেউ জানেন না এটি সর্দি-কাশি নাকি দূষণের প্রভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যৌথ স্বাস্থ্যঝুঁকি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে আগামী সপ্তাহগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

    সমীক্ষা পরিচালনাকারীরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যেন দূষণের মূল উৎসগুলো যেমন যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলা, ও পাঞ্জাব-হরিয়ানার খড় পোড়ানো — কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাশাপাশি নাগরিকদের মাস্ক পরা, ঘরের বাতাস পরিষ্কার রাখা ও বড় জনসমাবেশ এড়ানো সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

    রিপোর্টের উপসংহারে বলা হয়েছে, “এখন কেবল পরিচ্ছন্ন বাতাস নয়, দরকার একটি সমন্বিত জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ।” দিল্লির মতো শহরে, যেখানে এখন শ্বাস নেওয়াই একপ্রকার বিপজ্জনক কাজ, এই সংকট আর রোজকার সমস্যা নয় — এটি এক দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়। নাগরিকরা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পরিশুদ্ধ বাতাস কোনও বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার যা বহু আগেই তাদের প্রাপ্য ছিল।
  • Link to this news (আজকাল)