এসআইআর আতঙ্কে সাবেক ছিটমহলবাসী, তাঁদের নাগরিকত্ব কি ফের কেড়ে নেওয়া হবে?
দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩১ অক্টোবর ২০২৫
নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে ফের কি অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন সাবেক ছিটমহলবাসীরা? ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে কোচবিহার-সহ সীমান্তবর্তী এলাকায়। প্রায় বারো হাজার প্রাক্তন ছিটমহলবাসী এখন নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এই এসআইআর প্রক্রিয়ায় ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে মানদণ্ড ধরা হয়েছে। কিন্তু সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা ২০১৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই কাছে ২০০২ সালের কোনও সরকারি নথিপত্র নেই। ফলে তাঁরা উদ্বিগ্ন— এবার কি তবে তাঁদের নাগরিকত্ব আবার প্রশ্নের মুখে পড়বে?
সাবেক মধ্য মশালডাঙার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি করা হবে। কিন্তু আমরা তো ২০১৫ সালে নাগরিকত্ব পেয়েছি। আমাদের কী হবে? সেটা কোথাও বলা নেই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সব পরিবারের মেয়েরা যাঁরা ছিটমহল বিনিময়ের আগে অন্যত্র বিয়ে করেছিলেন, তাঁদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্যাও এখন জটিল আকার নিচ্ছে। পরিবারগুলির দাবি, তাঁদের মধ্যে অনেকে এখনও পূর্ণ নাগরিক স্বীকৃতি পাননি। নতুন করে এসআইআর প্রক্রিয়া তাঁদের আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় হয়েছিল। ওই সময় ভারতের অধীনে থাকা ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশকে দেওয়া হয় এবং ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। এই বিনিময়ের ফলে দীর্ঘ দশকের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন সীমান্তবাসীরা। কিন্তু এখন তাঁদেরই প্রশ্ন, নাগরিকত্ব কি আবার কেড়ে নেওয়া হবে?
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এসআইআর প্রক্রিয়ায় যদি ২০০২ সালের নথিকেই একমাত্র ভিত্তি ধরা হয়, তবে ছিটমহল বিনিময়ের পর নাগরিকত্ব পাওয়া হাজার হাজার মানুষ নতুন করে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় পড়বেন। তাই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই বিশেষ নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া, যাতে মানুষ আবার অস্থিরতা বা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পথে না যান।