ইস্তাহার প্রকাশের মঞ্চ থেকে ২৬ সেকেন্ডে বেরিয়ে গেলেন নীতীশ, ২০ বছরের রিপোর্ট কার্ডের বদলে সেই টাকা-চাকরির ‘জুমলা’, বিরোধী তোপ
বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: মাত্র ২৬ সেকেন্ড! স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে সম্ভবত সংক্ষিপ্ততম নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠান। অবিরাম বৃষ্টিভেজা পাটনায় শুক্রবার সকালে এনডিএর নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ মঞ্চে হাজির ছিলেন তাবৎ জোটশরিকের কর্ণধাররা। জগৎপ্রকাশ নাড্ডা, চিরাগ পাসোয়ান, উপেন্দ্র কুশওয়া, জিতনরাম মাঝি এবং সর্বোপরি নীতীশ কুমার। একসঙ্গে ইস্তাহারের পুস্তিকা হাতে ধরে ফোটোসেশনের চিরাচরিত রীতি পালিতও হল। সেই ছবির মাধ্যমে প্রাণপণে প্রয়াস ছিল জোটের ঐক্যের বার্তা দেওয়া। কিন্তু ঐক্য দূরঅস্ত! বরং দূরত্বের আভাস উস্কে দিয়েই মাত্র ২৬ সেকেন্ডের মধ্যে মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন নীতীশ। কিছুটা বিহ্বল জগৎপ্রকাশ নাড্ডা সহ অন্য নেতারাও বাধ্য হয়ে তাঁকে অনুসরণ করলেন। হতচকিত মিডিয়া এবং প্রত্যাশিতভাবেই উল্লসিত বিরোধী দলগুলি। সামাল দেওয়ার জন্য মঞ্চে কে? উপ মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী! তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ততক্ষণে যা ড্যামেজ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আসল খবর হল, নীতীশ কুমার প্রকাশ করে দিয়েছেন—তিনি মোটেই সন্তুষ্ট নন। সোজা কথায়, এনডিএতে অল ইজ নট ওয়েল!
নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের প্রধান লক্ষ্যই হল হেডলাইন ম্যানেজমেন্ট! অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছর নানাবিধ গালভরা কী কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, তা নিয়ে চর্চা চলবে সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। ইস্তাহারকে সামনে রেখে প্রতিটি জোটশরিকের নেতারা ভাষণও দেবেন। বিশেষ করে উপস্থিত যেখানে ২০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী তথাকথিত ‘সুশাসনবাবু’! নীতীশবাবু। কিন্তু রাজনৈতিক মহল কোনওদিন দেখেনি যে, একটিও বাক্য উচ্চারণ না করে ইস্তাহার প্রকাশ শেষ হয়ে গেল মাত্র ২৬ সেকেন্ডে। কী আছে এনডিএ ইস্তাহারে? এক কোটি চাকরি, যাকে বিরোধীরা নয়া জুমলা আখ্যা দিয়েছে। কারণ, ২০২০ সালে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে বলা হয়েছিল, ১৯ লক্ষ চাকরি দেওয়া হবে। ২০২৫ সালের ইস্তাহারে আরও বলা হয়েছে, ১২৫ ইউনিট ফ্রি বিদ্যুৎ, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ফ্রি। ৫০ লক্ষ নতুন আবাসন। মহিলাদের অর্থসাহায্য। কংগ্রেসের অশোক গেহলট অথবা আরজেডির তেজস্বী যাদব কিংবা জন সুরাজের প্রশান্ত কিশোর কার্যত একই সুরে এই ইস্তাহারকে নিছক বিহারবাসীর সঙ্গে ধাপ্পা আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, যে মুখ্যমন্ত্রী ২০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন, তিনি নির্বাচনে শুধু ইস্তাহার প্রকাশ করবেন কেন? তাঁর ও তাঁর জোট সরকারের তো রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করার কথা যে, ২০ বছরে কী কী করা হয়েছে। এখনও যদি বলা হয় কী কী করা হবে, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, সবটা ধোঁকা।
যদিও এইসব ছাপিয়ে দিনভর বিহারের চর্চা হয়ে রইল, নীতীশ কুমার একটিও শব্দ উচ্চারণ করলেন না কেন? ২০২০ সালে ইস্তাহার প্রকাশের সময় ঘোষণা করা হয়েছিল, নীতীশ আগামী পাঁচ বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী। এদিন কিন্তু হল না। তেমন কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে বলেই কি মিডিয়ার থেকে পালালেন এনডিএ নেতারা? নাকি ভোট শুরু হওয়ার আগেই খেল দেখানো শুরু করে দিলেন নীতীশ?