নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: গভীর রাত। বর্ধমানের গোলাপবাগের চারদিকে ভয়ঙ্কর নিঃস্তবদ্ধতা। আচমকায় বাংলোর অন্দরে কিসের যেন আওয়াজ! মনে হচ্ছে যেন শিশু কিংবা মহিলার গলা। ঠিক শুনছি তো? নাকি মনের ভুল। দু’টো কান আবারও খাড়া করে শুনলেন। আবারও ভেসে এল একই আওয়াজ। এবার মনে হচ্ছে, ছাদে কেউ হাঁটাহাটি করছে। বিছানা ছেড়ে ধড়পড়িয়ে উঠে সটান বসে পড়লেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক। গোটা গা কাঁপছে। কপাল থেকে ঝরতে শুরু করেছে ঘাম। তড়িঘড়ি নিরাপত্তারক্ষীদের ডাকলেন। ঘন অন্ধকার ভেদ করে চলল বিস্তর খোঁজাখুজি। কিন্তু, কাউকে তো পাওয়া গেল না! নিরাপত্তারক্ষীরা বাইরেও তল্লাশি চালালেন। কেউ কোত্থাও নেই। ততক্ষণে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছেন সকলেই। সবার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। ইঙ্গিতটা সম্ভবত সন্ধ্যায় পেয়েছিলেন ওই আধিকারিক। বাংলোর সামনের একটা পথবাতি প্রতি রাতেই জ্বলজ্বল করে। ওদিন সন্ধ্যা নামতেই কেমন যেন জ্বলছিল আর নিভছিল! গভীর রাতে বাংলোর ওই আওয়াজে রক্তচাপ বেড়ে যায় তাঁর। রাতভর নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেননি তিনি।
রাত গড়িয়ে ভোর হয়। সকাল হয়। কিন্তু আওয়াজটা কার, সেটা অবশ্য জানা গেল না। আর কোনও ঝুঁকি নিলেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ আধিকারিক। কয়েকটি পথবাতি খারাপ হয়েছিল। সেগুলি তড়িঘড়ি সারানো হল। বাংলোয় নজরদারিও বাড়ালেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শঙ্করকুমার নাথ অবশ্য এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইলেন না।
তবে এক আধিকারিক ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন, গভীর রাতে হূলস্থূল কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল। কোনও কিছুর আওয়াজ তো নিশ্চয় ভেসে এসেছিল। তা না হলে তিনি আতঙ্কিত হবেন কেন? এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সন্ধ্যা ঘনালেই নিঃস্তব্ধতা নেমে আসে। চারদিকে বিভিন্ন ধরনের গাছ। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে একাধিক খাল। গা ছমছমে পরিবেশ। মাঝ রাতে শিয়াল জাতীয় কোনও পশুর ডাক কানে আসে। ক’ দিন আগেই সেন্ট্রাল লাইব্রেরি থেকে বড় গোখরো সাপ দেখা যায়। এক কর্মী দরজা খুলেই থমকে যান। ফণা তুলে সামনে দাঁড়িয়ে সাপটি। চিৎকার করতে থাকেন তিনি। ছুটে আসেন অন্যান্য কর্মীরা। এর আগেও সাপ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এমন অশরীরী আত্মার উপস্থিতি কোনওদিন দেখা যায়নি। এক কর্মী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশ পরিষ্কার করা দরকার। রাস্তায় হাঁটতেও ভয় করে। কখন গোখরো, কেউটে বেরিয়ে আসবে, তা কেউ জানে না। অশরী আত্মার দরকার নেই। প্রাণ ছিনিয়ে নেওয়ার পক্ষে গোখরোই যথেষ্ট। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এক আধ্যাপক বলেন, ‘সবটাই মনের ভুল। ভূত, প্রেত বলে কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এধরণের গুজব ছড়ানো উচিত নয়। এখানে বিজ্ঞানের চর্চা হয়। সেই জায়গায় শুক্রবার দিনভর অশরীরী আত্মা নিয়ে চর্চায় মশগুল থাকল। এটা দুর্ভাগ্য।’