• মারণ ক্যান্সারকে হারিয়ে নবম স্থানে নিমতার অদ্রিজা গণের বিস্ময়কর লড়াই
    বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ২০২১ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত কেমোথেরাপি নিতে হয়েছিল মেয়েটিকে। সবমিলিয়ে ৮২ টি কেমো। ক্যান্সারের মতো অসুখকে হারিয়ে জিতেছে এই কিশোরী। এবার তুড়ি মেরে জিতল বোর্ডের পরীক্ষা। অদ্রিজা গণ উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টারে নবম স্থান অর্জন করেছে। তার জীবনের গল্প সেই রূপকথার মতো, বহুবছর বাদেও যা আগ্রহের সঙ্গে পড়বে সবাই।

    অদ্রিজা বাগবাজার রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্রী। উত্তর দমদম পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের উদয়পুর সাউথে থাকে। শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সেমেস্টারের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। সবাইকে চমকে দিয়েছে অদ্রিজা। ১৯০ নম্বরের পরীক্ষায় তার প্রাপ্তনম্বর ১৮৫। বাংলায় ৪০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৩৯, ইংরেজিতে ৪০ এর মধ্যে ৪০ পেয়েছে। ইকোনমিক্সে ৩৮, ভূগোলে ৩৫ নম্বরের মধ্যে ৩৪ এবং সাইকোলজিতে ৩৫ নম্বরের মধ্যে ৩৪ পেয়েছে। 

    ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর দিনটি গণ পরিবারের কাছে কালোদিন। অদ্রিজার বয়স তখন ১২ বছর। অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ল তার শরীরে বাসা বেধেছে টি-সেল লিম্ফোমা নামে এক জটিল রোগ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল মুম্বই। টানা আট মাস চলল মরণপন লড়াই। যমে-মানুষে টানাটানি। জিতল অদ্রিজা। বাড়ি ফিরল। তবে মারণ অসুখের সঙ্গে লড়াই চলতেই থাকল নিরবচ্ছিন্ন। অসুস্থতা এবং তার কারণে তৈরি হওয়া ক্লান্তি ছুড়ে ফেলে বই নিয়ে বসল বাচ্চা মেয়েটি। শুরু হল পড়াশোনা। চিকিৎসার জন্য স্কুল যেতে পারল না। ফলে সপ্তম শ্রেণিতেই থেকে যেতে হল আরও একবছর। তবে হাল ছাড়া তো দূর, চোয়াল আরও শক্ত করে চালিয়ে যেতে থাকল পড়া। সঙ্গে চলল ক্যান্সার। সমান্তরালভাবে চলল চিকিৎসাও। অবশেষে ২০২১ সালের জুনে এসে শেষ হল কেমো। আর ২০২৫ সালে অক্টোবরের শেষ দিনে অক্লান্ত লড়াইয়ের ফসল ফলল। এখন মেধাতালিকায় জ্বলজ্বল করছে অদ্রিজা গণ নামে একটি মেয়ের নাম। যে মেয়েটির লড়াই চমকে দিয়েছে তার আশপাশের দুনিয়াকে। 

    এখনও ওকে নানা ধরণের নিয়মের মধ্যে অত্যন্ত সাবধান হয়ে থাকতে হয়। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয়। অদ্রিজার বাবা জয়মঙ্গল গণ টাকি বয়েজ হাইস্কুলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। মা জ্যোতিদেবী বেলঘরিয়া বয়েজ হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা। বড় দিদি সৃজা পিএইচডি’র প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অদ্রিজা বলেন, ‘মা-বাবা, স্কুলের শিক্ষিকাদের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ ছাড়া এই ফলাফল সম্ভব ছিল না। ভবিষ্যতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা।’ জয়মঙ্গলবাবু বলেন, ‘ও রাত জাগতে পারে না। বাইরে টিউশন নিতে যেতে পারে না। দুপুরে না ঘুমিয়ে পড়াশোনা করত। এই সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব ওর স্কুলের। পড়ার প্রতি ভালোবাসা অন্তহীন। তাই স্কুলের পড়ার বাইরে গল্প, উপন্যাস পড়ে। ও লড়াই চালিয়ে সুস্থ হয়ে ভালো ফলাফল করেছে, এর থেকে বড় প্রাপ্তি আমাদের আর কিছুই হতে পারে না।’
  • Link to this news (বর্তমান)