• সিঁথিতে বন্দুক ঠেকিয়ে স্কুটার সমেত ৩ কোটির সোনা লুট
    বর্তমান | ০১ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: স্কুটারের ডিকিতে ছিল ৩ কোটিরও বেশি টাকার সোনা। বড়বাজার থেকে তা নিয়ে ওয়ার্কশপে ফিরছিলেন ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের এক কর্মী। ওয়ার্কশপের দরজার সামনেই তাঁর বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে স্কুটার সমেত ওই সোনা নিয়ে উধাও হয়ে গেল দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাতে দুঃসাহসিক এই অপরাধের ঘটনাটি কলকাতার সিঁথি থানা এলাকার রাজা অপূর্ব কৃষ্ণ লেনে ঘটেছে। লুট করা হয়েছে ২ কেজি ৩৮০ গ্রাম সোনা। অলঙ্কার তৈরির জন্য তা আনা হচ্ছিল সিঁথির ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশের সন্দেহ, এই ঘটনায় ভিতরের কেউ জড়িত। সেই কারণে শুধু ওই ইউনিটের কর্মীরাই নয়, কারা কারা সেখানে যাতায়াত করতেন তাদের তালিকা তৈরি করেছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের মালিকের নাম খিলেশ শেঠ। বিভিন্ন বড় দোকান থেকে সোনা ও ডিজাইন নিয়ে এসে মজুরির বিনিময়ে অলঙ্কার তৈরি করা হয় তাঁর ওয়ার্কশপে। কাজ করেন ১২ জন কর্মী। ওই ওয়ার্কশপেরই তিন ও চারতলায় তাঁদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন দোকানে মাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কর্মচারী রেখেছেন খিলেশ। বড়বাজারে তাঁর একটি গোডাউন রয়েছে। দু’জন কর্মীও রয়েছেন সেখানে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সোনা এনে ওই গোডাউনে মজুত করা হয়। ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট সূত্রে খবর, সেখানকার কর্মী সঞ্জিত রায় বড়বাজারের গোডাউন থেকে সোনা নিয়ে আসতেন। এমনকি কারখানায় জিনিসপত্র দরকার পড়লে, তা কিনেও আনতেন। উৎসবের মরশুম চলায় প্রায় প্রতিদিনই সোনা আসছিল। প্রতিদিনের মতো গত ২৯ অক্টোবরও তিনি বিকেলের দিকে কোম্পানির স্কুটার নিয়ে বেরিয়ে যান বড়বাজারে। স্কুটারের ডিকিতে প্রায় ২ কেজি ৩৮০ গ্রাম সোনা নিয়ে রাত ৮টা ১০ নাগাদ ফের কারখানায় পৌঁছন। সঞ্জিতবাবুর বক্তব্য, স্কুটার কারখানার সামনে রেখে লোহার দরজার হাতল খুলছিলেন। সামনে ঘুরতেই দেখেন, তাঁর বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে এক দুষ্কৃতী। মাথায় টুপি পরা আর এক দুষ্কৃতী ততক্ষণে স্কুটারে চেপে বসেছে। চাবি স্কুটারে লাগানো ছিল। নিমেষের মধ্যে গাড়ি স্টার্ট করে সে পালিয়ে যায়। বন্দুক ধরে থাকা দুষ্কৃতীও অন্য রাস্তা দিয়ে দ্রুত চম্পট দেয়। সঞ্জিতবাবু চিৎকার করলেও লাভ হয়নি। ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। মালিককে ফোন করে ঘটনার কথা জানান সঞ্জিতবাবু। রাত ন’টা নাগাদ মালিক ফিরে গোটা ঘটনা জানতে পারেন। পরে সিঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সঞ্জিত রায়। গত ৩০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় লুট, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো সহ একাধিক ধারায় কেস দায়ের করেছে পুলিশ।

    তদন্তকারীরা প্রথমে সঞ্জিতবাবুকে বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা দেখতে পান, ওয়ার্কশপের গেটের দু’প্রান্তে দু’টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু ফুটেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা যায়, ঘটনাস্থলের দিকে তাক করে রাখা সিসি ক্যামেরা খারাপ। অন্য গেটের ক্যামেরা নীচে নেমে যাওয়ার কারণে সামনে দুষ্কৃতীদের দেখা যাচ্ছে না। তদন্তে জানা গিয়েছে, বড়বাজারের গোডাউনে গত ২৯ অক্টোবর এসেছিল ওই সোনা। সেখান থেকে তা সিঁথিতে আসবে একথা জানত গোডাউনের দুই কর্মী। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ভিতরের কারও মাধ্যমে দুষ্কৃতীরা এই খবর পেয়েছিল। কারখানা ও গোডাউনের কর্মীদের মোবাইল পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ঘটনার আগে বা পরে তাঁদের কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসেছিল কি না। যে সমস্ত সোনার দোকান থেকে সোনা আসত, সেখানেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মোবাইলের সূত্র ধরে কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হলেও অভিযুক্তদের ধরা যায়নি।
  • Link to this news (বর্তমান)