• বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুজো মণ্ডপের মতো কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রীর ভাসানেও জনপ্লাবন
    আনন্দবাজার | ০১ নভেম্বর ২০২৫
  • বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এ বারে জগদ্ধাত্রী পুজোয় আনন্দে মেতেছিলেন দর্শনার্থীরা। সব কিছুকে উপেক্ষা করেই জগদ্ধাত্রী পুজোয় ঠাকুর দেখতে জনতার ঢল নেমেছিল কৃষ্ণনগরে। কয়েকশো পুজোর মধ্যে বাছা বাছা দশটি পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। শুধুমাত্র এক দিনের পুজোর চিরায়ত প্রথা ভেঙ্গে নবমীর বদলে সপ্তমী থেকে ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণনগরে। বুধবার থেকেই আনাগোনা বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ নবমীর সন্ধ্যা নামতেই বাঁধভাঙা জলোচ্ছ্বাসের মতো জনতার ঢল আছড়ে পড়ে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন মণ্ডপে। মাঝেমধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি কিছুটা তাল কাটলেও, থামানো যায়নি কৃষ্ণনগরের উৎসবমুখর জনতাকে। যা দেখে খুশি উদ্যোক্তারাও। পুজো পর্ব শেষ হতেই শুক্রবার সকাল থেকে কৃষ্ণনগরে শুরু হয় ভাসানের প্রস্তুতি। দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য ও প্রথা মেনে সকালে হয় ঘট ভাসান এবং সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রীর ভাসান দেখতে হাই স্ট্রীট চত্বর থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত ব্যাপক ভিড়। বিসর্জনের সময়ে অশান্তি এড়াতে তৎপর পুলিশ প্রশাসন। পুজোর দিন থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলেও ভাসানের দিনে নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক পুলিশ। সেই মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। নাগরিক নিরাপত্তার কথা ভেবে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী। রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের নজরদারিও।

    এ বছরও রয়েছে কৃষ্ণনগরের প্রতিমা নিরঞ্জনের ঐতিহ্যশালী সাং। কাঁধে করে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় কদমতলা ঘাটে। প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যদিও সময়মতো ভাসান শেষ করা নিয়ে ধন্দে রয়েছে প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগরকে ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। ডিএসপি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও আধিকারিকেরা নজরদারির দায়িত্বে রয়েছেন। পুলিশ আধিকারিক, পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ার মিলিয়ে মোট আড়াই হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয় শহর জুড়ে। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর ঘাট থেকে কাঠামো দ্রুত তুলে ফেলতে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রস্তুত দু’টি ক্রেন। বিসর্জন ঘাটে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে স্পিড বোট-সহ উপস্থিত রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শহরের বিদ্যুৎবাহী তার থেকে যাতে কোনও রকমের বিপত্তি না ঘটে সে জন্য সতর্ক করা হয় বিদ্যুৎ দফতরকেও।

    পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর কৃষ্ণনগরে পারিবারিক ও বারোয়ারি মিলিয়ে তিনশোর কাছাকাছি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি পুজো কমিটি ঘট ভাসানের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে। প্রথম দিনে ভাসানে অংশ নিয়েছে শহরের ৫৭টি ঐতিহ্যবাহী পুজো। অশান্তির আশঙ্কায় রাতভর বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। মহিলাদের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকছে ‘উইনার্স’ বাহিনী। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ বলেন, “কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজো সুসম্পন্ন করতে যা যা আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সব নেওয়া হয়েছে। পুজোর দিন যেমন শান্তিপূর্ণ ভাবে কেটেছে, আশা করছি, ভাসান প্রক্রিয়াও শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)