অক্টোবরের গোড়ায় অতি-ভারী বৃষ্টির ধাক্কায় একাধিক ত্রাণ শিবির চালু করতে হয়েছিল। এ বার ‘মোন্থা’র ধাক্কায় শুক্রবার নতুন করে ত্রাণ শিবির চালু হল উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং সমতলে। অতিবৃষ্টির ফলে হড়পা বান, বন্যা-ধসের আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে এ দিনই ভুটান সরকার সে দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। ভুটানের নদীবাহিত জলে অক্টোবরের শুরুতে বন্যা হয়েছিল ডুয়ার্সে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ খণ্ডবহালে বলেন, ‘‘আমরা ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি।’’
দুর্যোগের দরুন যান চলাচল বন্ধ হয়েছে মিরিকের পথে দুধিয়ার অস্থায়ী সেতুতে, তিস্তাপারের গ্রাম থেকে সরানো হয়েছে বাসিন্দাদের। ক্ষতি হয়েছে পাকা ধান এবং আনাজের। তবে রাত পর্যন্ত কোনও নদীর জলই বিপদসীমায় পৌঁছয়নি।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার দিনভর কোথাও মুষলধারে, কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়েছে। এ দিন দুপুর থেকে একাধিক বার জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের জন্য কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর ‘রেড ওয়ার্নিং’ জারি করে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আজ, শনিবার হালকা-মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কাল, রবিবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
বিজনবাড়ির চুংথুংয়ে বড় গাছ ভেঙে পড়ায় একটি প্রাথমিক স্কুলবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। মহানন্দা নদীর জল বেড়ে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে পোড়াঝাড় এলাকায় নদীর চরে বসবাসকারীরা জলবন্দি হয়ে পড়েন। শতাধিক মহিলা এবং শিশুকে ত্রাণশিবিরে আনা হয়। বালাসন নদীতে জল বাড়তেই দুধিয়ার হিউম পাইপ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। গত ৪ অক্টোবরের বন্যা-ধসে বিধ্বস্ত হয়েছিল মিরিকের তাবাকোশি। সে গ্রামে ফের নদীর জল বেড়েছে। গ্রাম থেকে ছ’টি পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়।
জলপাইগুড়ি জেলায় ধূপগুড়ির হোগলাপাতা, কুল্লাপাড়ার বাসিন্দাদের প্রশাসন নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেও, তাঁরা অন্যত্র যেতে রাজি হননি। হোগলাপাতা এলাকায় ত্রাণ শিবির চলছিল আগে থেকেই। সে এলাকা ফের জলমগ্ন। ত্রাণশিবিরে থাকা রুপালি বাড়ই বলেন, “বাড়িঘর কবে হবে জানি না! তাঁবুর ভিতরে জল ঢুকে গিয়েছে। সেখানেই থাকতে হচ্ছে।”
আগের বিপর্যয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নাগরাকাটার বামনডাঙার বাসিন্দাদেরও ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ময়নাগুড়ির তিস্তা পারের পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে। নাগরাকাটার বামনডাঙা চা বাগানের ৬০০ বাসিন্দাকে বাগানের কারখানায় ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে আলিপুরদুয়ারের গেরগেন্ডা নদীর সেতুর একাংশ ধসে, চিড় ধরেছে মূল কাঠামোয়। মেচপাড়া চা বাগানের এক ঝোরার জল হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আটকে যায় চা-শ্রমিক ভর্তি গাড়ি।
ক্রমাগত বৃষ্টিতে সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সিকিমের নাথু লা, ছাঙ্গু এলাকায় এ দিন ভোরে তুষারপাত হয়েছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব হিমালয়ের উপর দিয়ে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে যাচ্ছে। তাই সিকিমের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় ওই তুষারপাত। ‘মোন্থা’র অবশিষ্টাংশ নিম্নচাপ হিসেবে বিহারের উপরে আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে উত্তর-পূর্বের দিকে যাবে।