এই সময়, লিলুয়া: দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নিয়েছে প্রায় একমাস আগেই। কিন্তু এখনও নোংরা জল জমে রয়েছে অনেক রাস্তায়। তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন লিলুয়ায় বাসিন্দারা। গত ৬-৭ মাস ধরেই এই পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে লিলুয়ার রবীন্দ্র সরণি, দেবী মন্দির লেন-সহ বেশ কিছু এলাকায়। এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি মিলবে, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই সব এলাকায় পুরসভার যে সব নিকাশি নালা রয়েছে, সেখান থেকে জল পাস হচ্ছে না। ড্রেনের জল উপচে জমা হচ্ছে রাস্তায়। তাতে মিশছে আশপাশের কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক। তার জেরে অনেকে চুলকানি-সহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। একান্ত প্রয়োজন না হলে মানুষজন ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। এলাকার বাসিন্দাদের একটাই প্রশ্ন, কবে মুক্তি মিলবে এই নরকযন্ত্রণা থেকে? অনেকেই অভিযোগ করছেন, বিধায়ক থেকে শাসক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সমাধানের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বালি পুরসভার ৮টি ওয়ার্ড রয়েছে লিলুয়াতে। কিন্তু নিকাশি সমস্যা মেটাতে বালি পুরসভা বিন্দুমাত্র সচেষ্ট নয় বলে অভিযোগ উঠছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে বালির বিধায়ক তথা বালি পুরসভার প্রশাসক রানা চট্টোপাধ্যায় এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তায় নোংরা জল দেখে তিনি আর গাড়ি থেকে নামেননি। এক বাসিন্দার কথায়, 'ডাক্তারবাবু ভালো করেই জানেন, এই নোংরা জলে পা দিলে কী হতে পারে। তার জন্যই তিনি গাড়ি থেকে নামার সাহস পাননি। অথচ, আমাদের সারা দিন সেই জলের উপর দিয়ে যেতে হচ্ছে।' বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অনেকেরই পায়ের ঘা সারছে না।
এলাকায় মাঝে মধ্যেই আন্ত্রিক, জন্ডিস ছড়াচ্ছে। বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। অনেকের ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া হচ্ছে। পানীয় জলের কলে নোংরা জল ঢুকে যাওয়ায় লোককে জল কিনে খেতে হচ্ছে।
বালি পুরসভার প্রশাসক রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'লিলুয়া এলাকায় নালা সাফাইয়ের কাজ চলছে। নর্দমা থেকে পাঁক ও পলি তোলার কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য অতিরিক্ত লোক নামানো হয়েছে। আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।'
হাওড়া সদরের যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি কৈলাস মিশ্র বলেন, 'লিলুয়ার সমস্ত রাস্তা ও নিকাশি নালার কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। তবে এটা ঠিকই, মানুষের কষ্ট হচ্ছে, সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। তবে কাজগুলো শেষ হলে আর সমস্যা থাকবে না।'
বালি পুরসভা সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন পুরসভায় নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় পুরসভায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ। অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে ৩৫টি ওয়ার্ডে জঞ্জাল অপসারণের কাজ চলছে। তীব্র আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে পুরসভা। টাকা পেতে দেরি হওয়ায় ঠিকাদাররাও কাজে ঢিলেমি দিচ্ছেন। তার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।