সুমন করাতি, হুগলি: জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের পর ক্লাবের খাওয়াদাওয়ায় সামান্য ডিম খাওয়া নিয়ে বচসা। গোঘাটের কামারপুকুরে বন্ধুর মারে খুন যুবক। এই ঘটনায় নিহতের বন্ধুকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের লোকজন।
নিহত বছর ছাব্বিশের রামচন্দ্র ঘোষাল। বাবা, মা, বোন এবং স্ত্রী নিয়ে সংসার তাঁর। শুক্রবার রাতে কামারপুকুরের লাহাবাজারে একটি ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসান ছিল। রাত দেড়টা নাগাদ বিসর্জনের পর ক্লাবের সামনে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছিল। সেখানে ডিম খাওয়া নিয়ে রামচন্দ্রর সঙ্গে কয়েকজনের বচসা হয়। তারপর খাওয়াদাওয়া শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় ফের বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, তখনই রাজু মাইতি নামে এক বন্ধু রামচন্দ্রকে লাঠি দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করে। পরিবারের লোকজন তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁকে উদ্ধার করে কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মৃতের বাবা বলেন, “আমি ঘরে শুয়েছিলাম। একজন ডেকে নিয়ে যায়। বলে দেখো ছেলের কী হয়েছে। আমি গিয়ে দেখি ঘাড়টা ফুলে রয়েছে। মাটিতে পড়ে। ওর শ্যালক ছিল বারবার ডাকে। আর উঠল না। ক্লাবের লোকজনেরা কোনও ব্যবস্থা করেনি। কেউ আমাকে খবরও দেয়নি। ডাকলে ছেলেটার এই অবস্থা হত না। যে মেরেছে তার ফাঁসি হোক।” সদ্য সন্তানহারা বাবা ডুকরে কেঁদে বলেন, “সামনে আমার মেয়ের বিয়ে। কত আশা ছিল। আর কী হবে?” নিহতের মা বলেন, “রাত সাড়ে ১১টা-১২টা হবে ওকে টেনে নিয়ে চলে গেল। আমি বললাম কী হয়েছে। কিছু বলল না। পরে বলল ছেলে আমার নেই। আমি ছুটে গিয়ে দেখি ছেলে পড়ে রয়েছে।” ঘটনাস্থলেই ছিলেন নিহতের শ্যালকও। তিনি বলেন, “ক্লাবে খাওয়াদাওয়া হচ্ছিল। ২-৩ জন ডিম পায়নি। তা নিয়ে ঝগড়াঝাটি হচ্ছিল। রাজু মাইতি ফেরার সময় লাহাবাজার তেমাথায় ওঁকে মারে। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। মৃত্যু হয়।”
তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়েছে। ক্লাব কমিটির সভাপতি বলেন, “বিসর্জনের পর ক্লাবের খাওয়াদাওয়া হয়েছে। ক্লাবের খাওয়াদাওয়া নিয়ে কিছু হয়নি। ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। তারপর যা হওয়ার হয়েছে। কী হয়েছে, তা বলতে পারব না। আমি ছিলাম না ঘটনাস্থলে।” যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। কয়েকদিন আগেই পুলিশসুপার নজরদারির জন্য একাধিক সিসি ক্যামেরার উদ্বোধনও করেছেন। তা সত্ত্বেও এহেন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা ও নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।