• জেলায় জেলায় এসআইআর নিয়ে তৎপর তৃণমূল, একটি ভোটার হারাতে চাইছে না শাসকদল
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • উপচে পড়ছে ভিড়। বিজয়া সম্মিলনী সবে শেষ হয়েছে। কিন্তু সীমিত সময়ের নোটিসে হাজির হয়েছেন তাঁরা। শুধু তৃণমূল স্তরের কর্মীরাই নয়, ভিড় জমিয়েছেন শাসক-বিরোধী দলের নীচু তলার কর্মী-সমর্থকেরা। কারণ একটাই ভোটার তালিকায় নাম থাকতে গেলে কী কী করতে হবে তা জানার জন্য উন্মুখ হয়ে মাঠ ভরাচ্ছে জনতা। এমনই ছবি দেখা যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শাসকদলের ডাকা এসআইআর ক্যাম্পগুলিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে শুরু করে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, উত্তর দিনাজপুর থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনা। সর্বত্রই এসআইআর ইস্যুকে সামনে রেখে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা কী বলেন তা নিয়ে কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে।

    উল্লেখ্য,  গত সোমবার এসআইআর ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ নভেম্বর থেকে এনুমারেশ ফর্ম নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাবেন বুথ লেভেল অফিসারেরা। তার আগে শুক্রবার দলের প্রায় ১৮ হাজার নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তৃণমূলের সদস্যদের একগুচ্ছ নির্দেশিকা দেন জোড়াফুলের সেনাপতি। বিএলও-দের সারাক্ষণ নজরে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। বিএলও-রা ভোটারদের বাড়িতে গেলে বুথ লেভেল এজেন্ট-২দের তাঁদের সঙ্গে থাকতে হবে। সূত্রের খবর, এই কয়েক মাস সব ভুলে বিএলও-দের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যাতে একজন ভোটারের নামও তালিকা থেকে বাদ না যায়। শুধু তাই নয়, ১০০ শতাংশ ফর্ম যাতে পূরণ হয়, তাও নিশ্চিত করার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

    আগামী ৩ নভেম্বর, সোমবারের মধ্যে রাজ্যের সব বুথে বিএলএ-২-দের নাম কমিশনে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। যদি কোনও বিএলও সহযোগিতা না করেন, তাঁর নামও দলকে জানাতে হবে। তার পরে রাজ্য স্তর থেকে বিষয়টি দেখা হবে। প্রত্যেক বিধানসভায় একটি করে ওয়ার রুম খোলার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

    সেনাপতির এই নির্দেশের পরই মাঠে নেমে পড়েছে তৃণমূল কর্মীরা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিটি ব্লক ও বুথে কাজ শুরু করে দিয়েছেন কর্মীরা। সেই উদ্দেশে ২ নভেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সহ নেতৃবৃন্দ, ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ,  প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতির  সদস্য সদস্যা,  প্রতিটি বুথ সভাপতি এবং বিএলএ-২ , জনপ্রতিনিধিগন,  শাখা সংগঠনের সভাপতিরা ব্লক অঞ্চল, জেলা পরিষদের সদস্য-সদস্যারা বেলা দুটোর সময় সবং দলীয় কার্যালয়ে এসআই আর  নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভার আয়োজন করেছে।

    শনিবার, অর্থাৎ ১ নভেম্বর ঘাটাল বসন্তকুমারী স্কুল মাঠে সব নির্দেশিকা জানিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সভা আয়োজন করে ঘাটাল জেলা তৃণমূল। তৃণমূল নেতা অজিত মাইতির নেতৃত্বে সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে অভিষেকের নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে অজিত মাইতি বলেন, একজনের নামও যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়, তা লক্ষ্য রাখতে হবে। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। দরকার পড়লে আমাদের দিল্লি পর্যন্ত যেতে হতে পারে। সাহস রাখতে হবে। এটার উপর নির্ভর করছে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন। জীবন দিয়ে আপনারা তৃণমূল করেন।

    তিনি আরও বলেন কেন্দ্র তৃণমূলকে হারানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই জান দিয়ে কাজটা করতে হবে।  কেন্দ্রের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে বলে জানান তিনি। চন্দ্রকোনা, কেশপুর, দাসপুর-ঘাটাল বিধানসভার বুথ সভাপতি, বিএলএ-২, গ্রাম ও শহরের সমস্ত স্তরের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আজকের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।

    অন্যদিকে নন্দীগ্রাম গ্রামের সামসাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী সুভাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে নিহত শহিদের জীবন দান ব্যর্থ হয়নি। কারণ বাংলা আজ মমতা বন্দ্যোপাধায়ের নেতৃত্বে উন্নয়ন হয়েছে। এস আই আর নিয়ে ভীত মানুষদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলে , ‘ভয় পাবেন না । জোট বদ্ধ থাকুন , এনুমারেশন ফর্ম ফিল আপ করে জমা করবেন । এক জন প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ হলেও লড়াই হবে আন্দোলন হবে।‘

    ছাব্বিশের ভোটে জিততে মরিয়া শাসকদল তৃণমূল। একটি ভোটারের নাম যাতে তালিকা থেকে বাদ না যায় তা নিয়ে সতর্ক তৃণমূল। রাজ্যের জেলায় জেলায় তাই এসআইআর নিয়ে কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বিজেপির ষড়যন্ত্র নিয়ে সরব তৃণমূল। আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ৪ নভেম্বর মিছিলেরর ডাক দিয়েছেন মমতা ও অভিষেক। পথে নেমে বিজেপির বিরোধিতায় সরব শাসকদল। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তৃণমূল। নির্বাচন কমিশন বিজেপির হাতের পুতুল এবং বাংলার প্রকৃত ভোটারদের নাম কেটে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।

    বাঙালিকে রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে, এসআইআর-এর নামে একটা জাতিকে ভয় দেখানোর প্রতিবাদে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে মানুষের কাছে থেকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে আতঙ্কিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধ পরিকর তৃণমূল কংগ্রেস।

     
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)