২০২২-এ দূষণ প্রাণ কেড়ছে ১৭ লক্ষ ১৮ হাজার ভারতীয়র, গরমে কমেছে কর্মক্ষমতা
বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: হিটওয়েভ। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ। অতিরিক্ত হলেই মৃত্যু নিশ্চিত। রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালে ভারতে ২০ দিন মারাত্মক তাপপ্রবাহ চলে। জলবায়ুর পরিবর্তন সমস্যা না থাকলে সংখ্যাটা সাড়ে ৬ দিন কম হতে পারত। এই অত্যধিক উষ্ণতাবৃদ্ধির মাশুল গুণতে হচ্ছে সারা বিশ্বকেই। তা মানুষের কর্মক্ষমতার উপরও আঘাত হানছে। এর জেরে কাজের সময়ও নষ্ট হয়েছে। হিসেব বলছে, ২০২৪ সালে ভারতে ব্যক্তিপিছু ৪২০ ঘণ্টা কাজের সময় নষ্ট হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। বিগত কয়েক দশক ধরেই এব্যাপারে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। এর প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে সেই আভাসও দিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি চিকিৎসা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ল্যানসেট’–এর এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্য বলছে, উষ্ণতাবৃদ্ধি বিশ্বে প্রতি মিনিটে একজন মানুষের প্রাণ কাড়ছে। এই সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে, জীবাশ্ম জ্বালানিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জ্বালানির অত্যধিক ব্যবহারে যে দূষণ হচ্ছে, তা বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণে প্রতি মিনিটে প্রাণ হারাচ্ছেন অন্তত একজন:হিসাব বলছে, ১৯৯০ সালের তুলনায় সারা বিশ্বে উষ্ণতা-জনিত মৃত্যুর হার বর্তমানে ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার মানুষ শুধুমাত্র অতিরিক্ত গরম ও হিটওয়েভের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। স্রেফ ২০২৪ সালেই ধোঁয়া আর দূষণের জেরে বিশ্বজুড়ে অন্তত দেড় লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে ডেঙ্গুর মত রোগ। লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণের হার।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণায়নের জেরে সবচেয়ে বেশি সংকটে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি। রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে দূষণের কারণে অন্তত ১৭ লক্ষ ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এদেশে। যা ২০১০ সালের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া ৭ লক্ষ ৫২ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি। বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ওয়াইল্ডফায়ার স্মোক’ বা দাবানল থেকে হওয়া ধোঁয়ার কথা। ২০২০-২৪ এর মধ্যে অন্তত ১০ হাজার মৃত্যু হয়েছে এই ধোঁয়ার কারণে। শুধু তাই নয়, ভারতীয়দের উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এর কারণে। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর অতিরিক্ত উষ্ণতার কারনে ভারতে মোট ২৪৭০০ কোটি সম্ভাব্য শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মূলত কৃষিকাজ, নির্মাণের মতো কায়িক পরিশ্রমের জীবিকায় আগ্রহ কমছে। বাধ্য হয়ে এসব কাজ করতে হলে, তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে শরীরে। ফলত বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকের অভাব দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতি রোধে দ্রুত কার্যকর জলবায়ু নীতি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প নেই। রিপোর্টেও সেই পরামর্শই দেওয়া হয়েছে।