নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শেয়ারে বিনিয়োগের টোপ দিয়ে দেশজুড়ে প্রতারণার ঘটনায় অভিযুক্ত মহম্মদ আনোয়ারকে শুক্রবার মালদহ থেকে গ্রেফতার করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। ইংলিশবাজার থানা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারের বিরুদ্ধে কোম্পানি খুলে সাইবার জালিয়াতির টাকা পার্ক করার অভিযোগ রয়েছে। তাকে শনিবার হাওড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, ডোমজুড়ের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় গত এপ্রিল মাসে মোবাইলে একটি মেসেজ পান। তাতে বলা হয়, শেয়ারে বিনিয়োগ করলে প্রচুর রিটার্ন মিলবে। তিনি আগ্রহ দেখালে তাঁকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কীভাবে ওঠানামা করছে, সেই তথ্য আসতে থাকে ওই গ্রুপে। তিনি বিভিন্ন কোম্পানিতে সব মিলিয়ে সাত লক্ষেরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগের পর প্রতিশ্রুতি মতো টাকা তিনি ফেরত পাননি বলে অভিযোগ। তিনি টাকা তুলতে চাইলে তাঁকে বলা হয়, এখন টাকা তোলা যাবে না। আরও কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। তাতে তিনি রাজি হননি। টাকা না মেলায় গত জুন মাসে তিনি হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ যে সব অ্যাকাউন্টে ওই টাকা গিয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করে। দেখা যায়, তার মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট। ওই ব্যাংকের ইংলিশবাজার শাখায় অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে। সেখানে অভিযোগকারীর টাকার একটি অংশ ঢুকেছে। যার পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। তদন্তে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাইবার জলিয়াতদের বিপুল টাকা প্রতিদিন ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকছে। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ ওই অ্যাকাউন্ট ব্লক করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছে। এরপর মালদহে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আনোয়ারকে। তাকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাইবার জালিয়াতদের সঙ্গে তার যোগযোগ রয়েছে। অনলাইনের সূত্র ধরেই এই যোগাযোগ। জালিয়াতরাই তাকে কোম্পানি খুলতে বলে। ওই কোম্পানির কারেন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যাতে বিপুল টাকা লেনদেন করা যায়। সেইমতো আনোয়ার কোম্পানি খুলে আরওসিতে নথিভুক্ত করায় এবং কোম্পানির নামেই কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলে। ওই অ্যাকাউন্ট মারফত লেনদেনের জন্য কমিশন পেত সে। অনেকদিন ধরেই সে এই কাজ করছে।
শনিবার ধৃতকে হাওড়া আদালতে তোলা হলে সরকারি কৌঁসুলি তারাগতি ঘটক বলেন, এই নেটওয়ার্ক বহু দূর ছড়িয়ে আছে। তাকে জেরা করে সাইবার জালিয়াতদের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। তাই তাকে পুলিশি হেপাজতে নেওয়া দরকার। সওয়াল শেষে বিচারক আনোয়ারকে ন’দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন।