• পারিবারিক বিবাদে স্ত্রী-কন্যাকে খুন করে আত্মহত্যা, চাঁপদানিতে দানা বাঁধছে রহস্য
    বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: স্ত্রী মুমতাজ পারভিন (৩২) ও ৮ বছরের কন্যা আফসা খাতুন পড়ে রয়েছে বিছানায়। আর বাড়ির কর্তা মহম্মদ কেয়ামুদ্দিনের দেহ ঝুলছে স্ত্রী’র ওড়না জড়িয়ে। বাড়ির ভিতর এমন দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠে চাঁপদানির অ্যাঙ্গাসের চন্দনপাড়ার বাসিন্দারা। এলাকায় তখন জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসান নিয়ে হইহই ব্যাপার। তার মাঝেই শনিবার দুপুরের দিকে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে স্থানীয়দের। সেই দৃশ্য দেখে তাঁরা খবর দেন গৌরহাটি ফাঁড়িতে। চন্দননগর কমিশনারেটের অধীনে এই গৌরহাটি থেকে পুলিশ এসে তিনটি দেহ উদ্ধার করে ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্ত্রী ও মেয়েকে বিষ খাইয়ে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন কেয়ামুদ্দিন (৪০)। 

    জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসান নিয়ে ওই এলাকাতেও মাতামাতি ছিল। তার মধ্যেই দুপুরের দিকে এই দৃশ্য চোখে পড়ে স্থানীয়দের। পুলিশ সূত্রের খবর, বারাকপুর আদালতে মুহুরির কাজ করতেন কেয়ামুদ্দিন। বস্তি এলাকায় কেয়ামুদ্দিনদের বাড়ি। জানা গিয়েছে, বাড়ির দেওয়ালের রং সবুজ। পুলিশ জানতে পেরেছে, সবুজ দেওয়ালে ইংরেজিতে বড়োহাতে সাতজনের নাম লেখা ছিল। সেই নামের নীচে ইংরেজিতে সংখ্যায় ৭ লিখে গোল করে দেওয়া রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের মনে হচ্ছে, এই সাতজনকেই মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, কিছুদিন আগে বাড়িতে না জানিয়ে কেয়ামুদ্দিন অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। সেই মহিলা আবার সামাজিক মাধ্যমে নানা রকমের লেখালেখি করেন। যার ফলে স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে বচসাও বাধে কেয়ামুদ্দিনের। আবার এর মাঝে অন্য বিষয়ও রয়েছে। পাশের বাড়িতেই কেয়ামুদ্দিনের বাবা-মা থাকেন। জানা গিয়েছে, কেয়ামুদ্দিন সম্প্রতি তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, একটি জমি বিক্রি করে টাকা তাঁকে দেওয়া হোক। কিন্তু বাবা রাজি হননি। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সেই জমি বিক্রি করতে চাননি কেয়ামুদ্দিনের বাবা। অ্যাঙ্গাস মূলত একটি কলোনি এলাকা। সমস্ত বাড়ি গায়ে গায়ে। কেয়ামুদ্দিনের বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, মা গুরুতর অসুস্থ। সম্পত্তি নিয়েও পারিবারিক অশান্তি চলছিল। ইমামবাড়া হাসপাতালে দেহগুলি নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সেখানেই ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। 

    পুলিশের প্রাথমিক দাবি, পারিবারিক অশান্তির জেরেই স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যা করে আত্মঘাতী হয়েছেন কেয়ামুদ্দিন। সাম্প্রতিককালে হুগলি জেলার চন্দননগর, চাঁপদানী, ভদ্রেশ্বর এলাকায় বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে যেখানে পারিবারিক অশান্তির জেরে সপরিবারে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)