• ভদ্রেশ্বরে নারীবেশে দেবীবরণ পুরুষদের
    বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: শনিবার সকাল থেকেই ভাসানপর্ব শুরু হয়েছিল চন্দননগরে। ঐতিহ্যের সেই ভাসানকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছিল শহর। আগেই সাজিয়ে রাখা হয়েছিল চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের একাধিক ঘাট। ভাসানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে শুরু হয় নানা ধরণের রীতি রেওয়াজ। সেসব দেখতে স্থানীয় থেকে বহিরাগত মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। তেঁতুলতলার পুরুষরা নারী সেজে দেবীবরণ করলেন। সুভাষপল্লির প্রতিমার জন্য ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হল। এমন নানা বিষয়ইজুড়ে থাকে চন্দনগরের জগদ্ধাত্রী নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে। সেসব যেমন ছিল তেমনই ছিল বিষাদময় উত্তেজনার প্রহর। সিঁদুর খেলা থেকে কোলাকুলি, দীর্ঘপথ ধরে গঙ্গার ঘাটে আসা, নানা আবেগের ছবি দেখা গিয়েছে শহর চন্দননগর-ভদ্রেশ্বরে।

    চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির অন্তর্গত ১৮০টি পুজো আছে। তারমধ্যে ৭০টি শোভাযাত্রা সহ ভাসান হয়। বাকিগুলির অধিকাংশই শনিবার সকালে নিরঞ্জন হয়েছে। কিছু আজ, রবিবার সারাদিন নিরঞ্জন চলবে। পাশাপাশি বাড়ির পুজোর প্রতিমা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনের বাইরেও কিছু পুজোর ভাসানপর্ব এদিন ছিল। নিরাপত্তার জন্য চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের ঘাটগুলিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। তবে এদিন নিরঞ্জনের সময় একটি পুজো কমিটির এক সদস্য জখম হয়েছেন। তাঁর আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিয়ে নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে নিরঞ্জন পর্ব মিটেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নিরঞ্জন উপসমিতির চেয়ারম্যান মানব দাস। তিনি বলেন, শনিবার সকালের নিরঞ্জনপর্ব সুষ্ঠুভাবে মিটেছে। 

    চন্দননগরের সবচেয়ে পুরনো পুজো হিসেবে ধরা হয় চাউলপট্টির আদি মায়ের পুজোকে। রীতি অনুসারে আদি মায়ের নিরঞ্জন দিয়েই জগদ্ধাত্রী নগরীর নিরঞ্জন পর্ব শুরু হয়। ঐতিহ্যের সেই পুজো মণ্ডপে এদিন বহু মানুষ ভিড় করেছিলেন। আবার সুভাষপল্লি উত্তরপাড়ার দেবীকে রেললাইন পার করে গঙ্গার ঘাটে নিয়ে আসতে হয়। সেই সময় থামিয়ে দেওয়া হয় ট্রেন চলাচল। সেই নিরঞ্জন পর্ব দেখতেও ভিড় কম ছিল না। এদিন অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন তেঁতুলতলা সর্বজনীনের মণ্ডপে। সেখানে দশমীর নিরঞ্জন পর্বে পুরুষরা নারীবেশে মা’কে বরণ করেন। শাড়ি এবং শাঁখা-সিঁদুরে সাজেন বরণকারীরা। কার্যকারণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি আছে। তবে আজও দশমীতে ওই রীতিতেই বরণ হয়। আর তা দেখতেই বহু মানুষের ভিড় হয়েছিল। সন্ধ্যায় শোভাযাত্রার নির্ঘণ্ট ছিল। তাই সকাল সকাল আদি মা’য়ের নিরঞ্জন পর্ব শুরু হয়। তারপরে ধাপে ধাপে চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরজুড়ে ঐতিহ্যবাহী প্রতিমার রীতি রেওয়াজ মেনে নিরঞ্জন হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)