মাটির নীচে কেব্ল, আলোর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রা আলো না নিভিয়েই
বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
অভিজিৎ চৌধুরী, চন্দননগর: এই প্রথমবার। আলোর শহর চন্দননগরের বিশ্বখ্যাত শোভাযাত্রা, প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব সম্পন্ন হল আলো না নিভিয়েই। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রার মুকুটে জুড়ল আরও এক পালক। সৌজন্যে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা। এতদিন বিরাট আকারের প্রতিমার নিরঞ্জন ও শোভাযাত্রার জন্য ঝুলন্ত বিদ্যুৎবাহী তার খুলে ফেলতে হতো। আর তাতেই চন্দননগরের বড় অংশ ডুবে যেত অন্ধকারে। বিশ্বখ্যাত আলো নিয়ে যতটা গর্ব ছিল চন্দননগরের, সেই সঙ্গে আপশোশ ছিল ঘরের অন্ধকার নিয়েও। সেই ‘দাগ’ মুছল এবার। রাজপথ কাঁপিয়ে যেমন জ্বলল মোহন আলোর সজ্জা, তেমনই বিদ্যুৎ বহাল রইল ঘরে ঘরে। তখন সবে সন্ধ্যা গঙ্গাপাড়ের জনপদের আড়ালে আবডালে, ঘরে-বাইরে ‘আলো’র উপস্থিতিতে উল্লাসে ফেটে পড়ল চন্দননগর।
বহু বছরের ঐতিহ্য, দর্শনীয় শোভাযাত্রাকে ঘিরে ভিড় জমতে শুরু করেছিল শনিবার দুপুর থেকেই। শহর তো বটেই গোটা বাংলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল চন্দননগরে। সূর্য ডুবতেই আলোর ইন্দ্রজাল নিয়ে রাজপথে সার নিয়ে নেমে পড়ে শোভাযাত্রার লরির বহর। ততক্ষণে ভিড়ে ঠাসাঠাসি ফরাসিদের এই প্রাক্তন উপনিবেশ। ভিড় সামলাতে ঘেমেনেয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছাসেবক থেকে পুলিশকর্মীরা।
ভিড়ের দাপট থাকলেও শোভাযাত্রা পর্ব রাত পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে মিটেছে। ভিড়ের বহর, আলোর মায়ায় মুগ্ধ জনতাকে দেখতে দেখতে খুশি হয়েছেন চন্দননগরের কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ। তিনি বলেন, ‘শোভাযাত্রা আড়েবহরে বেড়েছে। আলোর সাজেও নতুন চমক ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত শোভাযাত্রা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। আশা করছি বাকি পর্বও সুষ্ঠুভাবে মিটবে।’ তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ‘এগিয়ে বাংলা’র ইউটিউব চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচারে তা চাক্ষুষ করেছে গোটা বিশ্ব। উল্লসিত রাজ্যের মন্ত্রী তথা চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন বলেন, ‘এই প্রথম শহরের আলো নেভাতে হয়নি, জল বন্ধ হয়নি। মাটির নীচ দিয়ে বিদ্যুৎবাহী কেব্ল পাঠিয়ে আমরা আলোর শহরকে আলোকিত রেখেছি। চন্দননগর বিশ্বকে আলোকসজ্জা দিয়েছে, আমরা আলোর শহরকে আলোময় রাখার উপহার দিয়েছি।’ চন্দননগরের বাসিন্দা তন্ময় গুহ বলেন, ‘প্রতিবছর জগৎ আমাদের আলোর শোভা দেখত। কিন্তু আমাদের আলো, জল বন্ধ থাকত। এবার সেই বিষাদের মুক্তি।’
শনিবার চন্দননগরের সকালটা ছিল রীতি রেওয়াজের নিরঞ্জনের। কিন্তু তখন থেকেই আলো না নেভার সঙ্গোপন আনন্দটা ছিল। রাতের আকাশ কাঁপিয়ে তখন একে একে সুসজ্জিত আলোর বহর পথে নামছে। নৃত্যের ভঙ্গিমায় হর-পার্বতীর বিয়ে, রাধা-কৃষ্ণের দোলনা বা বীণাবাদনরত সরস্বতী, সার্কাসের শোভা, ফুলের সাজ রঙিন করে তুলছিল শহর। তখন উল্লাসের ধ্বনি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাতাস। তাতে মিশেছিল আলো নিয়ে ঐতিহ্যের অহংকার আর বাড়িতে আলো না নেভার আনন্দও।