• ‘ক্লাস করিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন!’ ফর্ম তুলব না, প্রশিক্ষণ শেষ হতেই বিক্ষোভ বিএলওদের
    বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বঙ্গে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের শুরুয়াত্ খুব একটা ভালো হল না। শনিবার সকালে কলকাতার গোলপার্ক সংলগ্ন নজরুল মঞ্চে এসআইআর সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন। উপস্থিত হয়েছিলেন যাদবপুর, কসবা সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও)। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হলই না, উল্টে বিএলওদের দাবিও মানা হয়নি বলে অভিযোগ। কী সেই দাবি? তা হল, স্কুলে ক্লাস করিয়ে এসআইআরের কাজ করা সম্ভব নয়। কমিশন আগে জানিয়েছিল, বিএলওদের অন্য কাজ করতে হবে না। সেইমতো ব্যবস্থা করতে হবে। দিতে হবে উপযুক্ত নিরাপত্তাও। আর এই দাবিতেই এদিন উত্তপ্ত হয়ে উঠল নজরুল মঞ্চ। বিএলওরা মঞ্চের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। একটা সময় পুলিশ আসে। ঠিক হয় বিএলওদের কথা শুনবেন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও)। সেই বৈঠকের পর বিএলওরা বাইরে এসে বলেন, ‘মৌখিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। তবে ৪ নভেম্বরের আগে আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে। নয়তো কেউ ইনিউমারেশন ফর্ম তুলব না।’

    যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিএলও পেশায় অঙ্ক শিক্ষক প্রশান্ত চৌধুরী বলছিলেন, ‘ইআরও পদে রয়েছেন এসডিও। তিনি আমাদের কথাই শুনলেন না। কাজ আমরা করতে চাই। কিন্তু এসআইআরের সময় আমাদের ‘অন ডিউটি’ দেখাতে হবে। সারাদিন স্কুলে ছাত্র পড়িয়ে রাত ৮টায় বাড়ি ফিরে, তারপর লোকের বাড়িতে যাব? স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও চিঠি আসেনি। এখন বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। এতদিন কী করছিলেন?’ ক্ষোভ উগরে দেন মহিলা বিএলওরাও, ‘সর্বত্র বিএলওদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। উপযুক্ত নিরাপত্তা না দিলে কাজ করব কীভাবে?’ তাঁদের আরও দাবি, যেসব বুথে এক হাজারের বেশি জনসংখ্যা সেখানে অতিরিক্ত বিএলও দিতে হবে। এই সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি ইআরও-র কাছে জমা দিয়েছেন বিএলওরা। পেশায় শিক্ষক শুভজিত্ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘এই সময়টা পরীক্ষা থাকে। খাতা দেখার ব্যাপারও রয়েছে। সেগুলো সামলে এসআইআরের কাজ করা যায়? অনেকে তিন-চার ঘণ্টা জার্নি করে স্কুলে যান। তাঁরা স্কুল করে আবার এসআইআরের কাজ করবেন কীভাবে? আমাদের স্কুলের কাছে লিখিত নির্দেশিকা না এলে আমরা ফর্ম তুলব না বলেই ঠিক করেছি।’ উত্তর কলকাতার বিধানসভা কেন্দ্রগুলির বিএলওদের নিয়ে এদিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে উলুবেড়িয়া লোকসভার সাতটি বিধানসভার বিএলওদেরও। সর্বত্র একই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।

    শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী বিএলও ডিউটি প্রতিরোধ মঞ্চের আহ্বায়ক অনিমেষ হালদারের বক্তব্য, ‘আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, বেছে বেছে শিক্ষকদের বিএলও ডিউটি দেওয়া চলবে না। এতে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিএলওদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিও আমরা জানিয়েছিলাম। তখন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব কমিশন। কার্যত রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা ছাড়া কেউ থাকবে না। আমরা স্পষ্ট জানাচ্ছি, নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা নিয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি না দিলে বিএলওরা কাজে যোগ দেবে না। প্রয়োজনে নিরাপত্তার দাবিতে সিইও দপ্তর অভিযান করা হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)