এসআইআরে ১ কোটি নাম বাদের আশঙ্কা, আমরণ অনশনে মতুয়ারা
বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, বনগাঁ: ‘নাগরিকত্ব’ প্রাপ্তির গাজর ঝুলে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে! একের পর এক ভোটে তাদের যথেচ্ছ ‘ব্যবহার’ করা হলেও, ভারতীয় নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন এখনও অধরা উদ্বাস্তু মতুয়াদের। এই আবর্তে এবার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) শুরু হতেই আতঙ্ক দানা বেধেছে গোটা জনগোষ্ঠীতে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ভোটার তালিকার এহেন শুদ্ধকরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মতুয়ারা। ফলে ২০০২’এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই তাঁরা তো বটেই, যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের পর্যন্ত আত্মীয়-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার হতাশা ক্রমে গ্রাস করছে। প্রাথমিক হিসেবে ওই জনগোষ্ঠীর এক কোটিরও বেশি মানুষের নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই এবার এসআইআর বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচির ডাক দিল অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ। আগামী ৫ নভেম্বর (বুধবার) থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। শনিবার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুর।
এই পর্বে বিজেপির নতুন টোপ, সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের (সিএএ) মাধ্যমে নাগরিক হওয়ার। ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত—এহেন বয়ানের শংসাপত্র কয়েকশো টাকায় ‘বিক্রি’ হচ্ছে মতুয়া অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু সিএএ’তে এখনও অন্তর্ভুক্ত হয়নি সেই সব শংসাপত্র। শঙ্কা তৈরি হয়েছে আরও একটি বিষয় নিয়ে। তা হল, সিএএ’তে আবেদন। যার অর্থ, নিজেকে ‘বিদেশি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ফলে ওই আবেদন করলে কোনওভাবেই ভারতীয় ভোটার তালিকায় থাকার কথা নয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম। এহেন জটিল পরিস্থিতিতে এসআইআরের প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে এদিন ঠাকুরবাড়িতে আলোচনায় বসেছিলেন সাধু, গোঁসাই ও দলপতিরা। পরে মমতাদেবী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে এসআইআর চালু করছে, তাতে ওপার থেকে আসা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যাঁদের ভোটে এতদিন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে, এখন তাঁদেরই বেনাগরিক করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে কেন্দ্র সরকার। তাছাড়া যে শংসাপত্র বিলি করা হচ্ছে, তা কিন্তু সিএএ’তে মানা হচ্ছে না।’ এসআইআর নিয়ে এহেন চাপান-উতোরের মাঝেই আগামী মঙ্গলবার গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের নেতৃত্বে আরও একটি মতুয়া মহাসংঘ আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে মতুয়া জনগোষ্ঠীর দু’কোটিরও বেশি মানুষের নাম রয়েছে ভোটার তালিকায়। তাঁদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে। লোকসভার বড় সংখ্যক বুথের প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটারই মতুয়া। এসআইআর কার্যকর হলে, প্রায় সকলেই ভোটাধিকার হারাবেন বলে আশঙ্কা মহাসংঘের। বাগদার জগদীশপুরের বাসিন্দা মতুয়া দলপতি পরিতোষ রায়। এদিন ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন তিনি। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও আতঙ্কিত পরিতোষবাবু। বললেন, ‘এতদিন এই দেশে থাকলাম, আমাদের ভোটে এমএলএ, এমপি, মন্ত্রী হলেন। এখন কেন আমাদের তাড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে?’ বাগুইআটির বাসিন্দা কৃষ্ণপদ মণ্ডলের কথায়, সিএএ’তে আবেদন করতে হলে, বাংলাদেশের একটা পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে। সেটা জমা দেওয়ার মানেই তো বেনাগরিক হওয়া!