• শওকতকে রুখতে হাত মেলালেন আরাবুল-কাইজ়ার
    এই সময় | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, ভাঙড়: ভাঙড়ের রাজনীতিতে উলটপুরাণ। ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ও কাইজার আহমেদের মধ্যে এক সময় সাপে–নেউলে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কথায় আছে না, আমার শত্রুর শত্রু, আমার বন্ধু।

    সেই ফর্মুলা মেনে ভাঙড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লাকে ঠেকাতে দুই চিরশত্রু নাটকীয় ভাবে একে অপরের হাত ধরলেন। পুরোনো বিবাদ ভুলে ভাঙড়ের দুই তৃণমূল নেতা একযোগে সরব হলেন শওকতের বিরুদ্ধে। তার কারণ, এই মুহূর্তে দু’জনেরই পয়লা নম্বর রাজনৈতিক শত্রু হলেন শওকত। এই ঘটনায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল।

    শওকত মোল্লাকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে শনিবার সকালে আরাবুল ও কাইজার যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ওই সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই শওকতের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন দুই নেতা। দল শওকতকে ভাঙড়ের দায়িত্ব দিলেও তাঁরা যে সেটা মানছেন না, তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেন কাইজার-আরাবুল।

    শওকতের নাম না করে এ দিন কাইজার আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘গত ২৫ তারিখ আমার পার্টি অফিস ভাঙা হয়েছিল। দলেরই কিছু লোক এই কাজ করেছিল। যাঁরা পার্টি অফিস ভেঙেছে, তাঁদের ভিডিয়ো রেকর্ডিং আমি পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’

    এক সময়ের রাজনৈতিক শত্রু আরাবুলের ভূয়সী প্রশংসা করে কাইজার বলেন, ‘ভাঙড়ে আমরা আরাবুলদার হাত ধরে তৃণমূল করেছি। ২০১১ সালে ক্যানিং পূর্বের যে ব্যক্তিকে (পড়ুন শওকত) ত্বহা সিদ্দিকির হাত ধরে তৃণমূলে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম, সেই ব্যক্তি আজ আমাদের প্রাণে মারার চেষ্টা করছেন। ভাঙড়ের কত মানুষের লাশ নিলে উনি শান্ত হবেন, সেটা জানতে চাই। উনি রাজ্জাকের মতো আর কতজনকে মার্ডার করতে চাইছেন? উনি তৃণমূলের লোককে মেরে বিরোধীদের জেল খাটিয়ে ভাঙড় বিধানসভা উপহার দিয়ে দলের কাছে ভালো সাজবেন, এটা হতে দেব না। ভাঙড়ের সাধারণ মানুষ ওঁর সাথে নেই। এই লোকটার বিরুদ্ধে আমাদের জেহাদ জারি থাকবে ২০২৬ পর্যন্ত।’

    শওকতের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন আরাবুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটেছে, সেটা সবাই জানে। জাহাঙ্গির খানের নাম ঘোষণা হয়েছে, কিছু ছেলে মিষ্টি খেয়েছে। তাই বলে, কাইজারের অফিস ভেঙে দিতে হবে। আমি মনে করি, অফিস ভাঙলেও মানুষের মন ভাঙা যাবে না। আমি আজ দলে নেই, কিন্তু দলের জন্য মন পড়ে আছে। যে সব দুষ্কৃতী দলের জামা পরে বাড়িতে–অফিসে ভাঙচুরের চেষ্টা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

    তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘যিনি ভাঙড়ের দায়িত্বে আছেন বলে দাবি করছেন, তিনি একের পর এক অন্যায় করছেন। উনি ভাঙড়ের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন, কারণ এখানে মধুর হাঁড়ি আছে। শওকত প্রসঙ্গে আরাবুল কোনও রাখঢাক না রেখেই বলেন, ‘উনি কতবড় খুনি, কতটা ভদ্রলোক, সে সব এখন বলবো না। খুন করেছেন এরকম অন্তত পঞ্চাশটা লোকের নাম বলতে পারব। আমরা চাই, ভাঙড়ে শান্তি ফেরাতে এবং সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে ওই ‘অবজারভার ভদ্রলোক’ এখান থেকে ছেড়ে চলে যাক।’

    এ ব্যাপারে শওকত বলেন, যাঁরা ২০২১ সালে দলকে হারিয়েছেন, দল বিরোধী কাজ করেছেন, তাঁরা এখন বড় বড় কথা বলছেন। ওঁরা কতবড় দুর্নীতিবাজ, সেটা সবাই জানেন। ওঁরা কী বলল, সে সম্পর্কে ভাবতে চাই না। দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা আমি সঠিক ভাবে পালন করতে চাই।’

    আরাবুল দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত। কাইজার দলে থাকলেও তিনি ততটা সক্রিয় নন। তার মধ্যেই হঠাৎ করে আরাবুল-কাইজার হাত মেলানোয় চিন্তায় পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এক শওকত অনুগামীর বক্তব্য, ‘ভাঙড়ে দাদা দলটাকে একটা বাঁধনে নিয়ে এসেছিলেন। যে ভাবে আরাবুল-কাইজার জোট বেঁধেছে, তাতে দলে ফাটল বাড়বে। ভোটে এর ফায়দা তুলবে আইএসএফ।

  • Link to this news (এই সময়)