• ঠাকুরবাড়ির আরও এক সদস্য নেতৃত্ব দেবেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের! তৃতীয় সমান্তরাল কমিটি ঘোষণা করার পথে শান্তনুর দাদা সুব্রত
    আনন্দবাজার | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির আরও এক সদস্য এ বার নেতৃত্ব দেবেন ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর। আগামী সপ্তাহেই তৈরি হচ্ছে মতুয়া মহাসঙ্ঘের তৃতীয় সমান্তরাল কমিটি। নতুন এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের দাদা তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। শনিবার নিজেই সে কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। সুব্রত জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার তিনি ‘তৃতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ ঘোষণা করবেন।

    ঠাকুরবাড়ির রাজনৈতিক বিভাজন সর্বজনবিদিত। বর্তমানে মতুয়া মহাসঙ্ঘের দু’টি অলিখিত বিভাজন রয়েছে সেখানে। চলে দু’টি সমান্তরাল কমিটি। একটি কমিটির সঙ্ঘাধিপতি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। অপর কমিটির সঙ্ঘাধিপতি বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। শান্তনু শিবিরের কমিটিতে মহাসঙ্ঘাধিপতি হিসাবে রয়েছেন তাঁর দাদা সুব্রত। অনেকেই মনে করেন, শান্তনুদের কমিটিতে সুব্রত মহাসঙ্ঘাধিপতি পদে থাকলেও আসলে এটি একটি কাগুজে পদ। সিংহ ভাগ ক্ষমতাই রয়েছে সঙ্ঘাধিপতির হাতে।

    বর্তমানে মতুয়া মহাসংঘের একটিই রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে। তার মধ্যেই দু’টি পৃথক কমিটি রয়েছে। এ বার তৃতীয় সমান্তরাল কমিটি গঠন করতে চলেছেন সুব্রতও। মতুয়া মহাসংঘের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে শনিবার প্রশ্ন করা হয় সুব্রতকে। জবাবে তিনি জানান, ৪ নভেম্বর সেটি ঘোষণা হবে। সুব্রত বলেন, “একই নাম, একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে তৃতীয় মতুয়া মহাসংঘ আমার নেতৃত্বে (তৈরি হবে)।” যদিও কেন তৃতীয় একটি কমিটি চালু হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানাননি সুব্রত। প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “৪ তারিখে আপনারা সেটা জানতে পারবেন।”

    দাদার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে শান্তনু বলেন, “ঠাকুরবাড়ির কেউ যদি আলাদা করে মতুয়া মহাসঙ্ঘ বা আলাদা কমিটি গঠন করতে চান, করতেই পারেন। আলাদা হওয়ার অধিকার প্রত‍্যেকের রয়েছে। কেউ আলাদা হতে চাইলে আমি তো বাধা দিতে পারি না।’’

    তৃতীয় সমান্তরাল কমিটি নিয়ে শান্তনুকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি তাঁর বিরোধী শিবিরের নেত্রী মমতাবালা। শান্তনুদের কমিটিতে সুব্রতকে ‘বঞ্চিত’ করে রাখা হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল সাংসদের।

    নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে মমতাবালাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সেটা ওদের পরিবারের ব্যাপার। বড় ভাইয়ের (সুব্রতর) অধিকার আগে থাকা উচিত। তাঁকে যে ভাবে ঠাকুরবাড়িতে তাঁর অধিকারের থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে— বড় ছেলে হিসাবে তাঁর অধিকার পাওয়া উচিত। সংগঠন ওরা কী করবে, সেটা ওদের ব্যাপার। আমি সে নিয়ে কিছু বলব না। কিন্তু বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুরের এই বাড়িতে অধিকার পাওয়া উচিত।”

    তবে মতুয়া মহাসঙ্ঘে ভিন্ন ভিন্ন কমিটির ফলে সাধারণ মতুয়াদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার কারণ নেই বলেই মনে করছেন মমতাবালা। তাঁর কথায়, “রাস্তা অনেক থাকতে পারে। কিন্তু কোন রাস্তা বেছে নিতে হবে, তা মতুয়ারা স্থির করবেন। কারা মতুয়াদের পাশে আছে, বিপদে পড়লে কোনও মতুয়া সংগঠন তাঁদের পাশে থাকে— সেই সংগঠনকেই তাঁরা বেছে নেবেন।”

    বস্তুত, প্রয়াত বীণাপাণি দেবী (বড়মা) কোনও দিন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হননি। তিনি ছিলেন মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা। ওই সময়ে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর সঙ্ঘাধিপতি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে সঙ্ঘাধিপতি হন মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তার পরে কিছু সময়ের জন্য সুব্রত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভাধিপতি হন। তবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার পরে শান্তনু দায়িত্ব নেন। শান্তনু মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি হওয়ার পরে সমান্তরাল একটি কমিটি ঘোষণা করেন মমতাবালাও। এত দিন পর্যন্ত এই দু’টি কমিটিই চলে আসছে সেখানে। এ বার নতুন একটি সমান্তরাল কমিটি গঠন করে সেটির নেতৃত্ব দিতে চলেছেন শান্তনুর দাদা সুব্রতও।

    ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দির থেকে প্রতিবছর রাস পূর্ণিমায় ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর সর্বোচ্চ কমিটি গঠন ও ঘোষণা করা হয়। সেখানে মূলত শান্তনু-শিবিরই থাকে, তারাই কমিটি ঘোষণা করে। মমতাবালার শিবির পৃথক ভাবে নিজেদের মতো করে কমিটি ঘোষণা করে। এখনও পর্যন্ত যা খবর, আগামী ৫ নভেম্বর শান্তনুরা ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দির থেকে কমিটি ঘোষণা করবেন। তার ঠিক আগের দিনই নতুন সমান্তরাল কমিটি ঘোষণা করতে চলেছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)