• মেয়ে কেন? শিশুর মুখে বিষ, ঠাকুমা অভিযুক্ত
    আনন্দবাজার | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • আজ, রবিবার ভারতের মেয়েরা মাঠে নামবেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মুকুট অর্জনের লড়াইয়ে। সে ফাইনালের আগে মেয়েদের কৃতিত্ব নিয়ে যখন দেশ জুড়ে চর্চা চলছে, তখন বাংলার এক গ্রামের সদ্যোজাত শিশুকন্যা হাসপাতালে মরণ-বাঁচন লড়াই লড়ছে। শিশুর মুখে বিষ দিয়ে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত তারই ঠাকুমা। অভিযোগ, মেয়ে হওয়ায় এই কাণ্ড। আট দিনের সেই একরত্তির মা-ও নাবালিকা। বয়েস সতেরো।

    দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা। যে ঝাড়গ্রাম জেলায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানেও জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনিক উচ্চপদে রয়েছেন মহিলারাই। তার পরেও শুধু কন্যাসন্তান বলে নিকটাত্মীয়ের হাতে সদ্যোজাতকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ না হলেও খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে গিয়েছিল পুলিশ। জেলা পুলিশের ডিএসপি সমীর অধিকারী বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্করের কথায়, ‘‘যেখানে এমন ঘটনা ঘটছে, সেখানে সচেতনতা প্রচার হবে। রাজ্যে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প রয়েছে। সবাই মিলে এক সঙ্গে লড়তে হবে।’’

    ঘটনাস্থল গোপীবল্লভপুর ২ ব্লক। শনিবার সকালে ওই শিশুকন্যার মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোতে দেখে তার মা। প্রথমে বাচ্চাটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। শিশু বিশেষজ্ঞ পেট ‘ওয়াশ’ করে তাকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করেন। ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, এসএনসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন শিশুটির প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি হচ্ছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক।

    গত বছর এই শিশুকন্যার মায়ের বয়স যখন ১৬, তখন গ্রামেরই ২২ বছরের এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে সে। দু’জনে চেন্নাই চলে যায়। ওই নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হলে বাপের বাড়িতে ফেরে। ছেলের পরিবার প্রথমে বিয়ে মানতে চায়নি। তবে মেয়ে হওয়ার পরে নাবালিকা শ্বশুরবাড়িতে যায়। অভিযোগ, মেয়ের জন্ম দেওয়ায় গঞ্জনা সইতে হচ্ছিল। ওই নাবালিকার মামাতো দাদার অভিযোগ, ‘‘মেয়ে বলেই বোনের শাশুড়ি বাচ্চাটির মুখে বিষ ঢেলেছেন।’’ সূত্রের খবর, ওই নাবালিকাও ডাক্তারদের কাছে দাবি করেছে, তাঁর শাশুড়িই ঘটনার জন্য দায়ী। গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার বিদ্যুৎ পাতর মানছেন, ‘‘পরিবারের লোক বিষ খাওয়ানোর কথা জানিয়েছিল।’’

    জঙ্গলমহলের এই জেলায় নাবালিকার বিয়ে করোনা-কাল থেকেই উত্তরোত্তর বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কিশোরী মায়ের সংখ্যা। ২০২৪-২০২৫ বর্ষে জেলায় নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা ছিল ২,৩৪৮ জন। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার স্বীকারোক্তি, ‘‘এখনও সচেতনতার অভাবরয়ে গিয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)