• নন্দাঘুন্টির আলোয় এক মঞ্চে প্রবীণ আরোহী ও ট্রেকারেরা
    আনন্দবাজার | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • ভারতীয় তথা বাঙালির পর্বতারোহণের ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত ১৯৬০ সালের কুমায়ুন হিমালয়ে নন্দাঘুন্টি (৬৩০৯ মিটার) অভিযান। প্রথম অসামরিক অভিযান হিসাবেঅনভিজ্ঞ এক দল তরুণের পর্বতারোহণের সেই স্বপ্নকে সযত্নে লালন করেছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর কর্ণধার এবং পর্বত অভিযাত্রী সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা অশোককুমার সরকার। সেই অভিযানের ৬৫ বছর উপলক্ষে শনিবার শহরে এক অনুষ্ঠানে এক ঝাঁক প্রবীণ পর্বতারোহী ও ট্রেকারকে সম্মান প্রদান করল পর্বত অভিযাত্রী সঙ্ঘ।

    ওই সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদক ও প্রবীণ পর্বতারোহী শ্যামল সরকার এ দিন বলেন, ‘‘নন্দাঘুন্টি অভিযান সম্ভবই হত না, যদি না সেই দামাল ছেলেদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীর প্রধান অশোককুমার সরকার। ওই অভিযাত্রী দলের সদস্য, সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষের লেখা বই আজও পাঠক সমাজে সমাদৃত। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, তেনজিং নোরগের মতো মানুষ এই অভিযানের বিরোধিতা করলেও অভিযাত্রীদের দমানো যায়নি।’’

    ইতিহাস বলছে, এই সঙ্ঘের সভাপতি হিসাবে অধীপকুমার সরকার ১৯৯০ সালে শুরু করেছিলেন অশোককুমার সরকার স্মৃতি সম্মান। পরে ২০২২ সালে পুনরায় চালু করা হয় প্রয়াত অশোককুমার সরকার ও তাঁর পুত্র অধীপকুমার সরকার স্মৃতি সম্মান। এ বছর পর্বতারোহণের পাশাপাশি, প্রবীণ ট্রেকারদেরও এই সম্মান প্রদান করা হয়েছে।

    এ দিনের অনুষ্ঠানে অশোককুমার সরকার স্মারক সম্মানে ভূষিত করা হল বিশিষ্ট ট্রেকার রতনলাল বিশ্বাস, আরতি দে, মিলন নাগ এবংপ্রবীণ দম্পতি তপন পণ্ডিত ও ঊষা পণ্ডিতকে। বিয়ের পরে কাশ্মীর দেখানোর শর্ত থেকে পণ্ডিত দম্পতির জীবনে পাহাড়-প্রেমের সূত্রপাত। এর পরে ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ২২টিরও বেশিঅভিযানে পাশাপাশি হেঁটেছেন এই দম্পতি। তবে তাঁদের সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিযান হল, ২০০৭ সালে কেদার থেকে বদ্রিনাথ পর্যন্ত ঐতিহাসিক পানপাতিয়া কলের রুট খুঁজে বার করা। সম্প্রতি স্ট্রোকের কারণে হাঁটতে সমস্যা হয়সত্তরোর্ধ্ব তপনের। তবু এ দিন অনুষ্ঠানের আগে স্ত্রীকে পাশে নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘২০০৭ সালে সহজ পথ খুঁজতে গিয়ে ছোট্ট একটা গলির খোঁজ পেয়েছিলাম। নাম দিয়েছিলাম পার্বতী গলি। সেই পথ দিয়েইকেদার থেকে মদমহেশ্বর হয়ে বদ্রিনাথ যাওয়ার পথটা হেঁটে পেরোই।এখন ওই গলির দৌলতে পানপাতিয়া কল অনেকটাই সহজ পথ, যা আগে কেউ জানতেনই না। ৫৩ বছর বয়সে তখন তো আর বড় বড় শৃঙ্গাভিযানের বয়স ছিল না। তাই ভেবেছিলাম, ট্রেকিংয়ে সোজা রাস্তা খুঁজে বড় কিছু করা যায় কিনা।’’ এর পরেও খিমলোগা পাস, রুপসু হিমবাহ-সহ একাধিক অভিযানে গিয়েছেনএই দম্পতি।

    ২০০১ সালে এভারেস্ট অভিযানের পথে নেপালের স্থানীয়দের জন্য চক্ষু চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে উদ্যোগী হয়েছিলেন মিলন নাগ, যা সাড়া ফেলে দিয়েছিল পাহাড়ে। কোন ভাবনা থেকে এমন উদ্যোগ? অনুষ্ঠানের শেষে তিনি বললেন, ‘‘শৃঙ্গাভিযানে তো সাফল্য পান আরোহীরা। কিন্তু যাঁদের কাঁধে ভর দিয়ে এই সাফল্য, সেই শেরপারা কী পান? সেই ভাবনা থেকেই পাহাড়ে গেলে স্থানীয়দের জন্য চোখের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার করানোর কথা ভেবেছিলাম। লাদাখে স্থানীয়দের চোখের অস্ত্রোপচারও করেছি। প্রভূত সাড়াও পেয়েছিলাম। এ দেশেপাহাড়ি মানুষগুলো আয়ুর্বেদ চিকিৎসাটুকুও সহজে পান না। তাই তাঁদের জন্য কিছু করতে চেয়েছি বরাবর।’’ এ দিন সম্মান প্রদান করা হয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে পাহাড়ে পাহাড়ে হেঁটে বেড়ানো প্রবীণ ট্রেকার রতনলাল বিশ্বাসকেও। দেশে-বিদেশে তাঁর ১১৪টি ট্রেকিং অভিযানের মধ্যে ৭৮টিই হল অধিক উচ্চতার ট্রেকিং রুটে অভিযান।

    এ ছাড়া, বিশেষ জীবনকৃতি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট অভিযাত্রী অনিমেষ বসুকে। অধীপকুমার সরকার স্মারক সম্মান পেয়েছেন রণজিৎকুমার রীত, কঙ্কনকুমার রায় এবং ১৯৯২ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিক্রমা অভিযানের সদস্য— দলনেতা শ্যামল, ডাক্তার অশেষ চক্রবর্তী, অমিতাভ ভট্টাচার্য, তাপস মৌলিক এবং প্রয়াতনিশিকান্ত সেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)