• ডিজিটাল গ্রেফতারির ফাঁদে প্রবীণ দম্পতি, তিন কোটি খুইয়ে সর্বস্বান্ত
    আনন্দবাজার | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • টানা দু’সপ্তাহ বাড়ি থেকে বেরোনোর উপায় নেই। বন্ধ করা যাবে না মোবাইল ফোন, ল্যাপটপও। শুধু তা-ই নয়, সর্বক্ষণ চালু করে রাখতে হবে ভিডিয়ো ক্যামেরা। সেই পথেই নাকি নজরদারি চালানোহবে। নজর রাখবেন খোদ সিবিআই, ইডি, আরবিআই, সাইবারতদন্তকারী সংস্থার অফিসারেরা। এমনকি তাতে নাকি নজর রাখবে সুপ্রিম কোর্টও! বার বার প্রচার, সচেতনতা কর্মসূচির পরেও এই ভুয়ো দাবিতে বিশ্বাস করে ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র শিকারহলেন মানিকতলার এক প্রবীণ দম্পতি। টানা প্রায় দু’সপ্তাহ ঘরবন্দি থাকার পরে প্রতারকেরা তাঁদের থেকে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেবলে শেষ পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ করে জানিয়েছেন তাঁরা। লালবাজারের সাইবার শাখা তদন্ত শুরু করলেও শনিবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতারির খবর নেই।

    পুলিশের দাবি, বেশ কিছুটা টাকা তুলে নেওয়ার আগেই আটকানো গিয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতাহয়েছিল, কোথায় টাকা তোলা হয়েছে, তার হদিস এখনও পাননি তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় আলোচনা শুরু হয়েছে, বার বার শহরেরপ্রবীণেরা কেন নিশানা হচ্ছেন? পুলিশেরই একাংশের দাবি, কেউ নিজের সারা জীবনের সঞ্চয়কে সুরক্ষিত করতে গিয়ে ফাঁদে পড়ছেন, কেউ শেষ বয়সে সামাজিক সম্মান হারানোর আশঙ্কায় প্রতারকের কথা মতো কাজ করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনপ্রতারণার শিকার প্রবীণেরা নিঃসঙ্গ বলেও পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে। কিন্তু কী ভাবে এই পরিস্থিতির বদল ঘটানো সম্ভব, সেই নিয়ে চিন্তায় পুলিশও। লালবাজারের এক সাইবার শাখার অফিসারের মন্তব্য, ‘‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট বা এমন কোনও গ্রেফতারি বলে যে আদতে কিছুই হয় না, সেটা কিছুতেই বুঝিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। চলতি বছরে এই নিয়ে প্রায় চারশো কোটি টাকার কাছাকাছি এই পদ্ধতিতে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে গিয়েছে পুলিশে।’’

    এই প্রতারণার সূত্রপাত গত ৫ অক্টোবর। একটি নামী কুরিয়র সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে একব্যক্তি ফোন করে মানিকতলার বাসিন্দা ওই দম্পতিকে। জানানো হয়, বেআইনি সামগ্রী ভর্তি কয়েকটিবাক্স ধরা পড়েছে। যা ওই দম্পতিরমধ্যে এক জনের নামে পাঠানো হচ্ছিল। এ নিয়ে সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। এর পরেই একটি ভিডিয়ো কলে এক ব্যক্তি নিজেকে সিবিআই অফিসার বলে পরিচয় দেয়। দাবি করে, তার নামঅমিত কুমার। সেই ব্যক্তিই দম্পতির ফোন ও ল্যাপটপের ভিডিয়োক্যামেরা চালু রাখতে বলে। এর পরে ধাপে ধাপে আরও দু’জন ভিডিয়োকল করে। এক জন নিজেকে আইপিএস অফিসার এবং সাইবার প্রতারণা শাখার প্রধান বলে পরিচয় দেয়। অন্য জন অর্থনৈতিক দুর্নীতি সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের কর্তা বলে পরিচয় দেয়। সিবিআই, আরবিআই, ইডি এবং সুপ্রিম কোর্টের নাম করে একাধিক ভুয়ো নথি তারা দম্পতিকে দেখায়। বিষয়টি মেটাতে টাকা দাবি করে প্রতারকেরা।

    বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করলেই সিবিআই গিয়ে তাদের গ্রেফতার করবে বলেও ভয় দেখানো হয়। এর পর দু’সপ্তাহে প্রায় তিন কোটি এক লক্ষ টাকা তাঁরাকয়েক দফায় প্রতারকদের দিয়ে দেন। পরে বোঝেন যে প্রতারিত হয়েছেন। তখন পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। পুলিশ ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ২০২৩ সালের ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে। দম্পতি নিজেদের পরিচয় প্রকাশে নারাজ। তাঁরা দু’জনেই বলেছেন, ‘‘জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় এখন হারিয়ে পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে। এই বয়সে সম্মান হারানোর ভয় পেয়ে বসেছিল।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)