• খালে যন্ত্র নামানোর পরিকল্পনা হলেও দিনের আলো দেখেনি উদ্যোগ
    আনন্দবাজার | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • সেচ শ্রমিকদের সুরক্ষার স্বার্থে খালের পানা পরিষ্কার করার জন্য এক ধরনের যন্ত্রনামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে পারেনি সেচ দফতর। তাই সেচ শ্রমিকদের চর্মরোগ আরসেপটিকে আক্রান্ত হয়ে কাজ করার দস্তুরই রয়ে গিয়েছে। রাজ্যের সেচ দফতর সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুর একটি খালে যন্ত্রের মাধ্যমে পানা সাফাইয়ের কাজ দেখেও এসেছিলেন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে ওই বিশেষ যন্ত্র কেনার বিষয়ে কথাও হয়েছিল সেচ দফতরের। ওই যন্ত্রের বিশেষত্ব ছিল, জলে নেমে কাজ করার সময়ে সেই পথে কোনও সেতু কিংবা ফুট ওভারব্রিজ চলে এলে সেটি পাড়ে উঠেও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ফের জলে নামতে পারে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

    রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানিয়েছেন, কাজের সময়ে সেচ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঠিকাদার সংস্থাগুলির সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করবেন। তবে, সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, খালের পানা পরিষ্কারের কাজ যন্ত্রের মাধ্যমে শুরু হলে সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রয়োজন কমে যাবে। তাতে তাঁরা আর্থিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হতে পারেন। এক অভিজ্ঞ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যন্ত্র নামালে শ্রমিকের চাহিদা কমবে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেটাও ভাবার বিষয়। তবে, শ্রমিকদের নিরাপদে কাজ করাতে একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করা হচ্ছে। তার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।’’

    সেচ দফতরের আধিকারিকদের একটি অংশের দাবি, শুধুই তাঁদের দফতর নয়, কলকাতা পুরসভা, ‘নিউ টাউন কলকাতাডেভেলপমেন্ট অথরিটি‌’ (এনকেডিএ)-র মতো পুর সংস্থাগুলিও শ্রমিকদের এই ভাবেই কাজ করায়। প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই শ্রমিকেরা এই ভাবে কাজ করেন। তাই ওই সব পুর সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সার্বিক এসওপি তৈরির বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেখানে খালের আশপাশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাপে কামড়ানোর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ‘অ্যান্টি ভেনাম’ রাখা বাধ্যতামূলক করা হবে।

    যদিও এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে খালের দূষিত জলে শ্রমিকদের নেমে কাজ করার পদ্ধতি এখনই বাতিল করার কথা ভাবা হচ্ছে না। বরং খালের জলে নামলেও সাপ-বিছের কামড় খাওয়া কিংবা কাচে শরীর জখম হওয়ার মতো ঘটনা কী ভাবে এড়ানো যেতে পারে, সে সব নিয়েই ভাবনাচিন্তা চলছে বলে খবর। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে যে, কলকাতা সংলগ্ন নোয়াই, চৌবাগা, বাগজোলার মতো খালে সাপের প্রবল উপদ্রব। চৌবাগা কিংবা মধ্যমগ্রামের কাটা খালের মতো জলাশয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন কারখানা থেকে রাসায়নিক মিশ্রিত জল এসে মেশে। যে কারণে ওই সব খালের জল কালো হয়ে থাকে। বিষাক্ত গ্যাস মিশে থাকে সেই জলে।

    কিন্তু দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকদের ফুরসত নেই এ সব নিয়ে ভাবার। চর্মরোগ বাসেপ্টিসেমিয়া এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মতো সচেতনতাও তাঁদের সিংহভাগের মধ্যে নেই। পাঁচ-ছ’বছর আগে চৌবাগা খালে নেমে কাজ করার সময়ে সাপের কামড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বলেও জানা গিয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদার সাহায্য না করলে সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আধিকারিকেরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তকে সাহায্য করেন বলে খবর।

    সেচ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডিঙি নৌকা কিংবা মোটরবোটের সঙ্গে পানাপরিষ্কারের যন্ত্র লাগিয়ে কাজ করার মতো প্রযুক্তি তাঁদের হাতে এসে গিয়েছে। তাতে শ্রমিকদের দূষিত জলে নামানোর মতো অমানবিক পদ্ধতি এড়ানো যেতে পারে। তাঁরা জানান, শহরতলি কিংবা গ্রামাঞ্চলেরখালের জল তুলনামূলক ভাবে পরিষ্কার। সেখানে পানা বড় হতে কিছুটা সময় লাগে। কিন্তু শহরাঞ্চলে প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদের খালে নামাতেই হয়। তাই এ নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)