বিষ্ণুপুরের ‘দশাবতার তাস’ নিয়ে তথ্যচিত্র বিশ্ব সিনেমার আঙিনায়
বর্তমান | ০২ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়েছেন খেলোয়াররা। ফলে কার্ডগুলির ঠাঁই শুধু শৌখিন মানুষের সংগ্রহালয়ে। বিষ্ণুপুরের ‘দশাবতার তাস’ নিয়ে এখন আর কেউ তাস খেলেন না। আর খেলে না বলেই তা বিলুপ্তপ্রায়ের তালিকাতে ঢুকে গিয়েছে।
এসব নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা সচররাচর চোখেও পড়ে না। না ধারণাটি ঠিক নয়। একজনের যথেষ্ট মাথাব্যথা আছে। সেই মানুষটির নাম শীতল ফৌজদার। তিনি বিষ্ণুপুরেরই বাসিন্দা। পেশায়-নেশায় শিল্পী। ধ্যানজ্ঞান বলতে একটিই— দশাবতার তাস। এখনও নিমগ্ন হয়ে এঁকে চলেন। হারিয়ে যেতে বসা এই শিল্পসামগ্রীকে আঁকড়ে ধরেই বস্তুত বেঁচে রয়েছেন তিনি। বহু পুরনো তাস বাঁচিয়ে রাখবেনই তিনি। এরকম মানুষ সাধারণত দেখা যায় না। ফলে তিনি অসাধারণ। আর অসাধারণ কিছুকে সামনে আনার দায়িত্বও রয়েছে সমাজের। সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তথ্যচিত্র নির্মাতা সৌরভ ভদ্র। তিনি শীতল ফৌজদারকে নিয়ে বানিয়েছেন ডকুমেন্টারি ‘ফৌজদার’। ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখাবে সেটি। ‘ডকুমেন্টারি’ বিভাগের প্রতিযোগিতায় রয়েছে তথ্যচিত্রটি।
বিষ্ণুপুরের রাজা ছিলেন বীর হাম্বীর। তিনি সম্রাট আকবরের দরবারে তাস খেলা দেখেছিলেন। তার নাম ‘গঞ্জিফা’। সেই খেলায় মুগ্ধ রাজা নিজের বাহিনীর এক সেনাকে নির্দেশ দেন তাস তৈরি করতে। রাজস্থান থেকে আসা সেই সেনা তৈরি করলেন দশাবতার তাস। তা জনপ্রিয় হল বিষ্ণুপুরে। বংশ পরম্পরায় সেই সেনার পরিবারই এখনও তৈরি করছে দশাবতার। শীতল ফৌজদার ওই পরিবারের ৮৭তম পুরুষ। শীতলবাবুর পরবর্তী প্রজন্ম এই শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত নয়। পরিচালক সৌরভবাবু বলেন, ‘শীতলবাবুই সম্ভবত দশাবতার তাসের শেষ আর্টিস্ট। এই তাস, এই খেলা বাঁচিয়ে রাখতে চান শীতলবাবু। ওঁর এই লড়াই, জেদের গল্পই আমরা তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে।’
দশাবতার তাস খেলার নিয়ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে আঁকা থাকে বিষ্ণুর দশ অবতার। সকাল থেকে রাতের মধ্যে সময় অনুযায়ী খেলার নিয়ম পাল্টে যায়। স্নান করে বসতে হয় খেলতে। খেলার মাঝে শৌচালয়ে গেলে ফের স্নানের নিয়ম। শীতলবাবু বলেন, ‘একসময় আমাদের বাড়ি লোকজন তাস খেলতে আসতেন। উন্মাদনা ছিল। আমাকে প্রথমে আঁকতে দেওয়া হত না। তবে আমার জেদ দেখে পরে কাকা রাজি হন শেখাতে। সম্ভবত ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে পারে এই আন্দাজ করেই শিখিয়ে গিয়েছিলেন।’ শীতলবাবুর তৈরি তাসের সমাদর বিদেশেও আছে। সৌরভবাবু বলেন, ‘আর ১৫ বছর পরে হয়ত দশাবতার তাস থাকবেই না। একটা ডকুমেন্ট রাখতে চেয়েছিলাম। প্রযোজক এবং ক্যামেরাপার্সন ঋক মুখোপাধ্যায়। তিনি বিষ্ণুপুরেরই ছেলে।’ ৯ নভেম্বর বিকেল পাঁচটায় ‘নন্দন ৩’ ও ১৩ নভেম্বর দুপুর দেড়টায় শিশির মঞ্চে দেখা যাবে তথ্যচিত্রটি। সৌরভ বলেন, ‘ইচ্ছা রয়েছে শীতলবাবুকে কলকাতায় আনার।’