• চাষির মুখে হাসি ফুটিয়ে রেকর্ড দরে পাটের বিক্রি
    এই সময় | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

    বহু বছর বাদে রাজ্যের পাট চাষিদের সোনালি দিন ফিরে এসেছে। এ বছর কাঁচা পাটের দাম আগের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। গত শনিবার রাজ্যের পাট-প্রধান জেলাগুলিতে প্রতি কুইন্টাল কাঁচা পাট বিক্রি হয়েছে গড়ে ৯২৫০ টাকায় (গত বছর ছিল ৫৫০০ টাকা) — যা পাটচাষের গত কয়েক দশকের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। পরিস্থিতি যা, কাঁচা পাটের দাম আগামী সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল ছাপিয়ে যেতে পারে।

    রাজ্যের কৃষি দপ্তর ও চট শিল্প মহলের দাবি, এই বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ পাটের পক্ষে অনুকূল ছিল। সময়মতো বর্ষার পর্যাপ্ত বৃষ্টি, খাল-বিলে পরিষ্কার ঝকঝকে অঢেল জল এবং পাট পচানোর উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে উৎপাদিত পাটের মান উন্নত হয়েছে। ফলে বাজারে গুণমানসম্পন্ন পাটের চাহিদা যেমন বেড়েছে, দামও চড়ছে। তবে, নানা কারণে পাট চাষ কম হওয়ায় পাটের উৎপাদন অনেকটাই কম।

    রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ বছর পাট চাষিরা অভাবনীয় কাঁচা পাটের দাম পাচ্ছে। চাষের খরচ বাদ দিয়েও লাভের মোটা টাকা নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো পাট প্রধান রাজ্যের কাছে এর থেকে বড় খবর আর কী হতে পারে! তিনি জানান, ভাল দাম না পাওয়ায় কারণে চাষিরা পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে, চাষিদের পাট চাষে উৎসাহ দিতে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। মন্ত্রীর দাবি, এ বছর চাষিরা যে দাম পাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে রাজ্যে পাট চাষ ফের বাড়বে।

    রাজ্যের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বহু চাষি জানিয়েছেন, এ বছর তাঁদের লাভ আগের তুলনায় দ্বিগুণ। নদিয়ার এক চাষি বলেন, ‘গত কয়েক বছর পাট বিক্রি করে খরচই উঠত না। কিন্তু এ বছর খরচ বাদ দিয়েও হাতে বেশ কিছু টাকা থাকছে।’

    কৃষি দফতরের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছর রাজ্যে পাট-চাষের জমির পরিমাণ প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কমেছে। তা সত্ত্বেও উন্নতমানের পাট উৎপাদনের ফলে মোট আয় আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চটকল মালিকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়া জুট মিল অ্যাসোসিয়েশন’ - এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাজারিয়া জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাঁচা পাটের দাম ১০ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল হয়ে যেতে পারে। তবে তাঁর দাবি, রাজ্যে কাঁচা পাটের যা চাহিদা সেই তুলনায় উৎপাদন এ বছর অনেক কম হয়েছে। ফলে কাঁচা পাটের জোগানের অভাবে রাজ্যের বেশ কিছু চটকলে সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ‘জুট বেলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক পুলক ঝা বলছেন, ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় কাঁচা পাটের এমন দাম দেখিনি। এ বছর বর্ষায় অন্যান্য চাষে যেমন ক্ষতি হয়েছে, সেখানে পাট চাষিদের লাভ হয়েছে।’
  • Link to this news (এই সময়)