• দুধের ডিস্ট্রিবিউটর থেকে ভুয়ো শংসাপত্রের কারবারি, জাল বহুদূর
    এই সময় | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: বছর দেড়েক আগেও যিনি সামান্য দুগ্ধজাত সামগ্রীর ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন, অল্প সময়ের মধ্যে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন জাল সার্টিফিকেটের হোতা। গত বুধবার শিলিগুড়ির কাছে বাগডোগরার ভুজিয়াপানি গ্রাম থেকে লালনকুমার ওঝাকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার পরে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

    জানা গিয়েছে, ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির চক্র শুধুমাত্র জন্ম-মৃত্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। শিকড় ছড়িয়েছে বহুদূর। নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে গ্রাহক ধরে মোটা টাকার বিনিময়ে তৈরি করা হয়েছে ভুয়ো স্কুল সার্টিফিকেট, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড এমনকী পাসপোর্টও।

    সরকারি নথিও বাদ যায়নি। সূত্রের খবর, এই চক্রে মহকুমার খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি ও জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকে বহু এজেন্ট সক্রিয়। গত এক বছরে এই সমস্ত এলাকায় অন্তত কুড়িজনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ধরা পড়েছেন, যাঁদের মধ্যে অন্তত ১২ জনের থেকে একই সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশের পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়েছে।

    বছর খানেক আগে একই ধরনের অভিযোগে বাগডোগরা থেকে গ্রেপ্তার হন লালন। সেই সময়ে নকশালবাড়ির রথখোলা থেকে জাল নথি-সহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি খড়িবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে জাল সার্টিফিকেট ইস্যু করার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

    ইতিমধ্যে রাজ্যের পুলিশ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স পৃথক ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। লালনের আগেই খড়িবাড়ি হাসপাতালে বসে জন্ম-মৃত্যুর ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির অভিযোগে পুলিশ পার্থ সাহা ও নবজিৎ গুহনিয়োগীকে গ্রেপ্তার করে। দায়িত্ব থেকে সরানো হয় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফুল্ল মিঞ্জকে। তাঁর জায়গায় ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএমওএইচ শফিউল আলমকে।

    এ দিকে লালনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, পনির, দুধ ইত্যাদির ডিস্ট্রিউটর থেকে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জড়িয়ে পড়েন জাল সার্টিফিকেট তৈরির কারবারে।

    দ্রুতগতিতে উত্থানও ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, এসবের মাঝে লালনের সঙ্গে পরিচয় হয় নবজিতের। নবজিৎ সেই সময়ে নকশালবাড়ি বিডিও অফিস সংলগ্ন এলাকায় বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (বিএসকে) চালাতেন। তিনিই লালনকে জাল নথি তৈরির গ্রাহক ধরে আনার প্রলোভন দেখান। তাতে পা দিয়ে লালন নথি তৈরির কাজ হাতে নিতে থাকেন।

    এই অবস্থায় পার্থর সঙ্গে লালনের যোগাযোগ করিয়ে দেন নবজিৎ। তার পর থেকে কারবার রমরমিয়ে চলছিল। বিষয়টি নিয়ে ডিসিপি রাকেশ সিং বলেন, 'এখনই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনায় আর কারা জড়িত, কোন কোন নেটওয়ার্ক কাজ করছে, সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'

  • Link to this news (এই সময়)