এসআইআরের বিরুদ্ধে এবার আন্দোলনে নামবে সমগ্র মতুয়া সম্প্রদায়। শনিবার মতুয়া সংঘের সংঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর আগামী ৫ নভেম্বর থেকে আমরণ অনশনের ডাক দেন। ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন হলে মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি। তা হতে দিতে চান না বলে জানিয়েছেন মমতাবালা ঠাকুর। আগামী বুধবার এর প্রতিবাদ জানিয়ে আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছেন তিনি।
তাঁর কথায়, এই অনশনমঞ্চ শুধুমাত্র মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্যই নয়, যে বা যাঁরা এসআইআরের প্রতিবাদ করছেন তাঁরাও এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। দেশের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি বাংলায় আগামী ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন। এসআইআর শুরু হওয়ার দিনেই প্রতিবাদ মিছিল ডেকেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরে শনিবার বনগাঁর মতুয়া সংঘের তরফে একটি বৈঠক করা হয়।
সেই বৈঠকের পরেই সাংবাদিক সম্মেলন করে মতুয়া সংঘের সংঘাধিপতি ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর আমরণ অনশনের কথা ঘোষণা করেন। এসআইআর বাতিলের দাবিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের সাধু,পাগল, গোঁসাইরা সম্মিলিতভাবে এই আমরণ অনশনে বসবেন। এদিন মমতাবালা বলেন, এসআইআর হলে প্রচুর সংখ্যায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের নাম বাতিল হতে পারে ভোটার তালিকা থেকে। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে সবথেকে বেশি মতুয়া ভোট আসে।
সেকারণে ভোটার তালিকা থেকে মতুয়াদের নাম বাদ পড়লে তা প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি পরবর্তীকালে তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়েও সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। আগামী ৫ নভেম্বর ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়ির বড়মা বীণাপানি দেবীর ঘরের বাইরে থেকে এই আমরণ অনশন শুরু করা হবে। এই অনশনের পাশাপাশি পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য রবিবার বৈঠকে বসবে অল ইন্ডিয়া মতুয়া সংঘ। বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে মমতাবালা ঠাকুরের নেতৃত্বে এই বৈঠক আয়োজিত হবে।
বৈঠকে মূলত এসআইআরের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিবাদ করা হবে ও মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া এই আন্দোলনকে পরবর্তীকালে বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যেতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে তাও আলোচনা করা হবে বলে জানা গিয়েছে এই বৈঠকে। এর পাশাপাশি বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতাবালা ঠাকুর। তিনি কেন এসআইআর নিয়ে প্রতিবাদ করেননি তার প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। এই প্রসঙ্গে এক নেতা বলেছেন, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়েছি। সেই ভোটেই কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হয়েছে।
এখন আবার কীসের ভিত্তিতে আমাদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে? কৌশল করে মতুয়াদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। আমরা তা মানবো না। এর প্রতিবাদ হবেই।’
এসআইআর নিয়ে শাসকদল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘাত ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। এবার এসআইআরকে হাতিয়ার করে নির্বাচনের আগে মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে চাইছে রাজনৈতিক দলগুলি। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর। গত কয়েকটি নির্বাচনেও একাধিকবার জয়ী হয়েছে বিজেপি। এবার সেই হারানো ভোট ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। এই আবহে মমতাবালার তরফে এই উদ্যোগকে নির্বাচনের আগে এক পরিকল্পনা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।