সৌরভ চৌধুরী: আজ রবিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে যখন মেয়েরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে মাঠে নামছেন, সারা দেশ যখন, মেয়েদের জয়জয়কার করছে, তখন এই রাজ্যেই শিশুকন্যা জন্মানোর অপরাধে মুখে বিষ ঢেলে খুনের চেষ্টা করল ঠাকুমা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের রাষ্ট্রপতি মহিলা, তখন শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা বিস্ময় জাগায় বৈকি।
'মেয়ে কেন?'— সদ্যজাতের মুখে বিষ! অভিযুক্ত ঠাকুমা। কন্যা সন্তান জন্মানোয় মুখে বিষ ঢেলে সদ্যজাতকে খুনের চেষ্টায় ঝাড়গ্রামে চাঞ্চল্য। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর দুই নম্বর ব্লকের বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত তালগ্রামের ঘটনা। অভিযোগ, কন্যা সন্তান জন্মানোর অপরাধে সদ্যজাত শিশুর মুখে বিষ ঢেলে খুনের চেষ্টা করেছেন তারই ঠাকুমা। অভিযুক্ত ঠাকুমাকে গ্রেফতার করেছে বেলিয়াবেড়া থানার পুলিস। ধৃতকে আজ ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হয়। ঘটনায় এলাকাজুড়ে নিন্দা ও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
নিকট আত্মীয়ের হাতে সদ্যোজাতকে খুনের চেষ্টা অভিযোগ ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ না হলেও খবর পেয়ে ঝাড়গ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিল পুলিস। জেলা পুলিসের ডিএসপি বলেন মর্মান্তিক ঘটনা। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব। ঝাড়গ্রামে জেলাশাসক বলেন, এখানে এমন ঘটনা ঘটছে সেখানে সচেতনতা প্রচার হবে রাজ্যে কন্যাশ্রী মাতা প্রকল্প রয়েছে। সবাই মিলে একসঙ্গে লড়তে হবে।
জানা গিয়েছে, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই গ্রামেরই এক ২২ বছরের যুবকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছিল ওই নাবালিকা। কিছুদিন চেন্নাইয়ে থাকার পর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ফিরে আসে বাপের বাড়িতে। সম্প্রতি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় সে। পরে নবজাতককে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গেলে শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। ছেলের পরিবার প্রথমে বিয়ে মানতে চায়নি তবে মেয়ে হওয়ার পরে নাবালিকা শ্বশুরবাড়িতে যায়। অভিযোগ মেয়ে জন্ম দেবার গঞ্জনা সইতে হয়েছিল ওই নাবালিকার মামাতো দাদার অভিযোগ নেই বলে বোনের শাশুড়ি বাচ্চাটির মুখে বিষ ঢেলেছেন।
পরিবারের অভিযোগ, 'ছেলে নয়, কেন মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছে?— এই কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শাশুড়ি। সদ্যজাত শিশুর মুখে বিষ ঢেলে দেন বলে অভিযোগ। গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের শনিবার সকালে শিশুকন্যার মুখ থেকে গ্যাজলা বেরোতে দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমে গ্রামীণ হাসপাতাল তারপর গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশু বিশেষজ্ঞ পেট ওয়াশ করে তাকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে রেফার করেন ডাক্তারের কাছে শিশুর মা দাবি করেছেন তার শাশুড়ি ঘটনার জন্য দায়ী কবি বলল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে সুপার বিদ্যুৎ মানছেন পরিবারের লোক বিস্তারনার কথা জানিয়েছিল।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে গোপীবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়ে ঝাড়গ্রাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, পেট ওয়াশের পরও শিশুটি তীব্র শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনিতে ভুগছে। বর্তমানে হাসপাতালের এফএনসিইউ বিভাগে ভর্তি শিশুটি সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিস। পুলিস জানিয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।