• ২০০০ টাকা দিলেই অবাধ প্রবেশ! ‘ডবল ইঞ্জিন’ ত্রিপুরায় বেলাগাম অনুপ্রবেশে কাঠগড়ায় বিএসএফ-পুলিশ
    প্রতিদিন | ০২ নভেম্বর ২০২৫
  • প্রণব সরকার, আগরতলা: ২০০০ টাকা দিলেই বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় চলে আসা যায়! সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশের কোনও বাধা থাকে না। যা নিয়ে ত্রিপুরা সীমান্তে শনিবার রাত থেকে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতারের ফেন্সিং থাকা সত্বেও সীমান্ত একেবারে উন্মুক্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য। সীমান্তববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা আঙুল তুলছেন বিএসএফের দিকে।

    প্রায় প্রতিদিন চলছে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশিদের ত্রিপুরার খোয়াই মহকুমায় প্রবেশের প্রতিযোগিতা চলছে। গত ১৫ দিনে খোয়াই থানা পুলিশের হাতেই ধরা পড়েছে ২২ জন অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি। আর এই সমস্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ভারতীয় কিছু দালালচক্র এতটাই সক্রিয় যে, টাকার বিনিময়ে এরা সীমান্ত অতিক্রম করে আসা অবৈধ বাংলাদেশিদের গাড়িতে করে পৌঁছে দিচ্ছে খোয়াই শহরে। স্থানীয় বিএসএফ জওয়ানরা সমস্ত কিছুতেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা শাখা রয়েছে। তাঁদের হাতেও কেন ধরা পড়ছে না অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরা? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    বৃহস্পতিবার রাতে করঙ্গী ছড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে মোট ১১ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করে ওই গ্রামেরই যুবক শঙ্কু দাস। তাঁদেরই শনিবার রাতে দুটি অটোরিক্সায় করে খোয়াই শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। রাস্তায় সোমবাড়িয়া বাজারে স্থানীয় বাসিন্দারা এই দুটি অটোরিক্সাকে আটক করে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝতে পারেন এরা বাংলাদেশি। এরপর উত্তেজিত জনতা বিশ্বজিৎ দাস এবং অতীশ দাস নামের দুই অটোচালককে গণধোলাই দেন। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে যান মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং চাম্পা হাওর থানার ওসি-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশের কাছে তাঁদের অভিযোগ, কিছু গাড়িচালক প্রতিনিয়ত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের শহরে পৌঁছে দিচ্ছে।

    পরবর্তীতে অটোচালকদের আলাদাভাবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায়, তাদের বাড়ি পশ্চিম করঙ্গী ছড়া এলাকায়। এদিকে পুলিশের গাড়িতে থাকা ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিকদের পুনরায় বাংলাদেশের ফেরত পাঠানোর দাবিতে পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে কয়েকশো মানুষ। পরিস্থিতি মারাত্মক উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বাইজাল বাড়ি থানা ও খোয়াই থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। শেষে রাত দু’টোয় বাংলাদেশি নাগরিক-সহ দুই গাড়িচালককে উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে যায় খোয়াই থানায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১১ জনের মধ্যে ছ’জন স্বীকার করে তারা বাংলাদেশ থেকে আগত। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জে। বাকি পাঁচজন দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি কমলপুর এবং শিলচরে। সবাই মাথাপিছু ২ হাজার টাকার বিনিময়ে সীমান্ত অতিক্রম করে এসেছিল।

    পুলিশ জানিয়েছে, ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে রয়েছে, মণিরানি দাস (৩০), তাঁর মেয়ে মহিমা দাস (৮) ও পিয়াসা দাস (৩), দেওর দীপন দাস (৩০), হৃদয় দাস (২৮) এদের সবার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ওপর বাংলাদেশি গোপাল দাসের (৪১) বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। এছাড়া কচুছড়ার প্রণবেশ সরকার (৩৬), কমলপুরের অর্চনা সরকার (৩৩), প্রিয়তম সরকার (৩), সাগর সরকার (১২), শিলচরের সুজিত দাস (৩৭) গ্রেপ্তার হয়েছে। এরা নিজেদের ভারতীয় হিসেবে দাবি করলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর শুরু করে রাতেই। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার রানাদিত্য দাস জানিয়েছেন, ধৃত ছয় বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত মামলা নেওয়া হয়। দুই অটোচালকের বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করছে পুলিশ। এবং দুটিঅটো রিক্সা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশের নেপথ্যে যে সমস্ত ভারতীয় দালালরা যুক্ত তাদের সন্ধানে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে ধৃত ৬ বাংলাদেশিকে পরদিন আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের জেল হেফাজরতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। অপরদিকে ধৃত গাড়ি চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ বাকি সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

    উল্লেখ্য ভারত ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের মধ্যে খোয়াই মহকুমায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ৬১.৫ কিলোমিটার। ৯৯% এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্লাড লাইট, সিসি ক্যামেরা ইত্যাদি সুবিধা বিএসএফের হাতে থাকলেও প্রতিদিন বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে চলছে মহকুমার উত্তর প্রান্তের সীমান্ত এলাকা দিয়ে। বড়বাগাই থেকে বেলছড়া, বগাবিল, খেংরাবাড়ি, এস-কে পাড়া ইত্যাদি এলাকাগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ১০৪ নং ব্যাটালিয়ন বিএসএফ। অন্যদিকে বাচাইবাড়ী থেকে চামু বস্তি, গোপালনগর, বিদ্যাবিল ইত্যাদি সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তায় রয়েছে ৭০ ব্যাটেলিয়ান বিএসএফ। সম্প্রতি তিন মাসে ৭০ ব্যাটালিয়ন বিএসএফের অন্তর্গত আন্তর্জাতিক এলাকাগুলো দিয়ে কাতারে কাতারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগেই বিদ্যাবিল এলাকায় বাংলাদেশী তিন কুখ্যাত গরু চোর গ্রামবাসীদের গণধোলাই এ মারা যায়। খোয়াই মহকুমার আশারাম বাড়ি বিধানসভা এলাকা দিয়ে যেভাবে বাংলাদেশীরা অবৈধ অনুপ্রবেশ শুরু করেছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন সাধারণ মানুষ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)