‘আমার সোনার বাংলা’ গান বিতর্কে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত, ক্ষোভ বিশ্বভারতীতে
প্রতিদিন | ০২ নভেম্বর ২০২৫
দেব গোস্বামী, বোলপুর: বাংলা ভাষা পর এবার তুচ্ছ বাংলার গান! তাও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি। প্রবীণ কংগ্রেস কর্মী বিধুভূষণ দাসের মুখে মঞ্চস্থ গানটি শুনে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা রুজু করতে বলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। শনিবার এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা, প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকরা। তাঁদের প্রশ্ন, গানটি তো ভারত রত্ন পাওয়া সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরও গেয়েছেন। গেয়েছেন সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিদেব ঘোষ, দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীরা। তাহলে কেন্দ্রীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্রষ্টার গানকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা আখ্যা দেওয়া কি ঠিক সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন?
ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই। সবাই গেয়ে থাকেন। আমরা এখনও সুখ দুঃখে এই গান গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহিতা হয়, তাহলে সবাই আমরা দেশদ্রোহী।’’ বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারা দাবি তোলেন, ‘‘আমরা যার পুজো করি সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের জাতীয় সঙ্গীত এটি। তাঁর লেখা গান গাওয়া ‘দেশদ্রোহিতা’ হয় কীভাবে।’’ অসমের মুখ্যমন্ত্রীর এমন আচরণে আক্ষেপ করেছেন শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা ও প্রবীণ আশ্রমিকরা। পাঠভবনের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ তো বিশ্ববন্দিত। তাঁর গান দেশ-বিদেশ সব জায়গায় গাওয়া যায়। কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ নেই। এমন ঘটনা অত্যন্ত আক্ষেপের।’’
অন্যদিকে, শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘রবীন্দ্রসঙ্গীত যে কোনও জায়গায়, যে কোনও পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। সেই সঙ্গে দেশদ্রোহিতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে দুঃখের।’’ বিশ্বভারতীর পড়ুয়া বান্ধুলি কারার বলেন, ‘‘এই গানটি শুধু একটা দেশের জাতীয় সঙ্গীত নয়। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তাঁরা মানবতার বিরোধী।’’