অ্যাকাউন্ট না খুলেই আমানতকারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ! অভিযুক্ত বেতাই সমবায় সমিতির অস্থায়ী কর্মী
প্রতিদিন | ০২ নভেম্বর ২০২৫
রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: রেকারিংয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠল বেতাই সমবায় সমিতির এক কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই কর্মীর নাম বঙ্কিম হালদার। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বেতাইয়ের ইউএলএসপিসিএসিএস লিমিটেডের ঘটনা। ঘটনা সামনে আসতেই হুলস্থূল কাণ্ড। শুধু তাই নয়, খবর সামনে আসতেই আমানতকারীদের মাথায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়েছে। টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে সমবায় সমিতির সামনে ভিড় জমান আমানতকারীরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে।
এই সমবায় সমিতির আমানতকারীদের দাবি, তাঁদের জমানো টাকা প্রত্যেক দিন বেতাই সমবায়ের কর্মী বঙ্কিম হালদারের কাছে দিয়ে ডেইলি সঞ্চয় একাউন্টে জমা করতেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে অফিস টাইমের আগে কিংবা পরে দোকান কিংবা বিভিন্ন আমানতকারীদের বাড়িতে গিয়ে টাকা তুলে আনতেন। বলতেন, সমবায় সমিতি থেকে ইস্যু করা বইতে সেই টাকা জমা করে দেবেন। এতদিন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। দুর্নীতি প্রকাশে আসে দিন কয়েক আগে। টাকা ম্যাচুরিটি হয়ে যাওয়ার পরেও সেই টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করতে থাকেন অভিযুক্ত বঙ্কিম হালদার। এরপরেই কয়েকজন সমবায় সমিতির অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সমবায় সমিতিতে টাকা জমা তো দূরের কথা, তাঁদের নামে কোনও অ্যাকাউন্ট খোলাই হয়নি। এই খবর জানার সঙ্গে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
আমানতকারীরা জানান, বঙ্কিম হালদার টাকা তুলে নিজের কাছে রেখে দিতে। শুধু তাই নয়, মাসে একবার সেই টাকা জমা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন। আমানতকারীদের যাতে কোনও সন্দেহ না হয় সেজন্য সুকৌশলে পাসবইয়েও তা তুলে দিতেন। এদিকে কোনও অ্যাকাউন্টও খোলা হয়নি ওই সমবায় সমিতিতে। সর্বপ্রথম ঘটনা প্রকাশ্যে আসে বেতাই সাধুবাজার গ্রামের দেবেন দাসের বই ম্যাচুরিটি হওয়ার পর। গত মাসের ৭ তারিখে তাঁর বই ম্যাচুরিটি হয়, টাকা না পেয়ে অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। দেবেনবাবু একজন টোটো চালক, তিনি সারাদিন টোটো চালিয়ে রোজগারের একটা অংশের টাকা সমবায় কর্মী বঙ্কিম হালদারের কাছে তুলে দিতেন। তার সর্বমোট ২৫ হাজার টাকা জমা হয়েছে বলে জানান। অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর নামে কোনও অ্যাকাউন্টই খোলা হয়নি।
শুধু দেবেনবাবু নয়, একই অবস্থা আরও এক আমানতকারী আনন্দ বিশ্বাসেরও। তিনি জানান, ”টোটো চালিয়ে প্রত্যেকদিন সমবায় কর্মী বঙ্কিম হালদারের কাছে ১০০ টাকা করে জমা রাখতাম। বইতে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা জমা হয়।” তাঁর অভিযোগ, ম্যাচুরিটি হওয়ার পরেও সেই টাকা পাচ্ছিলাম না। অফিসে গিয়ে জানতে পারি কোনও অ্যাকাউন্টই খোলা হয়নি। শুধু দেবেন দাস কিংবা আনন্দ বিশ্বাসই নয়, এমন বহু আমানতকারীদের টাকা জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি। সব মিলিয়ে প্রতারণার অঙ্ক লক্ষাধিক বলে দাবি আমানতকারীদের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
ঘটনায় সমবায় সমিতির ম্যানেজার সঞ্জিত ভক্ত জানান, ”আমাদের অফিসে ডেইলি কালেকশন দীর্ঘদিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে রেকারিং চালু আছে।” সঞ্জিতবাবুর দাবি, বঙ্কিম হালদার একজন অস্থায়ী কর্মী। অফিস টাইমের বাইরে কোথা থেকে কিভাবে টাকা তুলেছে, সেই দায়ভার সমবায়ের উপর বর্তায় না। তবু আমানতকারীদের কথা ভেবে বিষয়টা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সমবায় সমিতির ম্যানেজার।
অন্যদিকে সমবায় সভাপতি বিষ্ণু হালদার জানান, ”বিষয়টা শুনেছি, বঙ্কিম হালদার একজন অস্থায়ী কর্মী। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। আমানতকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করব তাঁদের সঙ্গে কত টাকা জালিয়াতি করেছে বঙ্কিমবাবু।” অন্যদিকে আমানতকারীদের কাছ থেকে যে টাকা তোলা হয়েছে সেই টাকা ফেরতের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান বিষ্ণু হালদার। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।