SIR গেরো! পাসপোর্ট সত্ত্বেও বহরমপুরের মহিলাকে বাংলাদেশ যেতে ‘বাধা’ পেট্রাপোল সীমান্তে
প্রতিদিন | ০২ নভেম্বর ২০২৫
কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যেতে আটকানো হল বহরমপুরের এক মহিলাকে। বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে আফরিনা হাসনাত নামে ওই মহিলাকে ফেরত পাঠানো হল বহরমপুরে। তাঁর অভিযোগ, পেট্রাপোল সীমান্তে কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকরা আফরিনা হাসনাতের ভিসা, পাসপোর্ট দেখার পরও বাবা-মায়ের ২০০০ সালের আগের ভোটার তালিকা, জমির দলিল-সহ একাধিক নথি দেখতে চান। কিন্তু সেসময় ওসব নথি না থাকায় তাঁকে বাংলাদেশ যেতে দেওয়া হল না বলে অভিযোগ। এর নেপথ্যে এসআইআর ‘চাপ’ কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। সীমান্তে মেয়েকে হেনস্তার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের বিরুদ্ধে জেলাশাসকের কাছে ইমেলে নালিশ জানিয়েছেন আফরিনার বাবা মীর হাসনাত।
ঘটনা ঠিক কী ঘটেছে? জানা গিয়েছে, মীর হাসনাত বহরমপুরের একজন চিকিৎসক। মেয়েকে বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। সেইমতো দু’দিন আগে আফরিনা বিদেশযাত্রার নথি হিসেবে পাসপোর্ট, আধার কার্ড নিয়ে একাই বাংলাদেশ যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে বাংলাদেশ যাওয়ার বাসের টিকিটও কেটেছিলেন তিনি। বাসে ওঠার আগে তাঁর তল্লাশি শুরু হয়। এরপর তাঁর ভিসা-পাসপোর্ট চেক করা হয়। আফরিনা হাসনাতের দাবি, ”আমার বৈধ পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। আমার বাবার আধার কার্ড, প্যান কার্ড দেখিয়েছিলাম, আমার নিজের আধার কার্ডও দেখিয়েছিলাম। কিন্তু ‘ওগুলি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়’ বলে উপস্থিত আধিকারিকরা বলে আমাকে কটাক্ষ করেন। সেসময় বাবার জমির দলিল আমার কাছে ছিল না, নিয়ে যাওয়ার কথাও নয়। তবুও ওই সমস্ত ডকুমেন্ট চাইছিল আধিকারিকরা। আমি বললাম যে এখন এসব নেই আমার কাছে। এও বললাম, আমাকে সময়মতো না ছাড়লে বাসটা পাব না। তাও কিছু শুনলেন না ওঁরা। বললেন, ওসব তাঁদের দেখার বিষয় না।”
শেষমেশ সীমান্ত আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে আর বাংলাদেশ যেতে পারেননি আফরিনা। তাঁর দাবি, ”আমি একজন মহিলা এবং এই প্রথম বাংলাদেশ যাচ্ছি বলে হয়তো আমাকে সন্দেহ করে আটকে দিয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে সন্দেহজনক কিছুই পাননি তাঁরা। আমার কাছে সমস্ত বৈধ নথিপত্র ছিল। আমি বারবার বললাম, যে এগুলো তো জাল নথি নয়। বিশেষত পাসপোর্ট সবচেয়ে বড় নথি। তাছাড়া নতুন কোন নির্দেশিকা থাকলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রেও সেটা হয়নি। আমার আর আত্মীয়ের যাওয়া হল না।”
অন্যদিকে মেয়ের সঙ্গে সীমান্তে পাসপোর্ট অফিসের আধিকারিকদের এই দুর্ব্যবহারের কথা শুনে বেজায় চটেছেন বহরমপুরের চিকিৎসক মীর হাসনাত। তিনি ওই মর্মে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই চিকিৎসক বলেন, ”আত্মীয় থাকার সুবাদে আমি নিজেও বহুবার বাংলাদেশ গিয়েছি। বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই গিয়েছি। কোনও অসুবিধা হয়নি। আমার মেয়ে আফরিনা সেই আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। তার কাছে বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা ছিল, বাসের টিকিট কাটাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পেট্রাপোল সীমান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকরা আমার মেয়েকে আটকে দেয়। এক দেশ থেকে অন্য দেশ যেতে পাসপোর্টই যথেষ্ট, সঙ্গে কেউ বাড়ির দলিল নিয়ে ঘোরে কি?”
মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, ”এটা একটা ক্রিমিনাল অফেন্স। পাসপোর্ট ভারত সরকার দিয়ে থাকে। সমস্ত কিছু বৈধ কাগজপত্র দেখেই পাসপোর্ট দেওয়া হয়। তাহলে ওই মহিলাকে কেন আটকে দেওয়া হলো! আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কেননা, বিদেশে যেতে হলে সকলেই তাঁদের বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা রাখেন। বাড়ির দলিল কেউ সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন না। এখানে ওই মহিলার বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা থাকা সত্ত্বেও কেন আটকে দেওয়া হলো, তার তদন্ত হওয়া উচিত।”