সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কয়েকদিন ধরে থাকা জল্পনা-ই সত্যি হল! আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে প্রার্থী দেবে ঝাড়খন্ড লোকতান্ত্রিক ক্রান্তিকারি মোর্চা। রবিবার পুরুলিয়ার জয়পুরের ফরেস্ট মোড়ের গোবিন্দ স্টেডিয়ামে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে ওই দলের সুপ্রিমো তথা ঝাড়খণ্ডের ডুমুরির বিধায়ক ‘টাইগার’ জয়রাম মাহাতো জঙ্গলমহলে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তবে কটি আসনে প্রার্থী দেবেন তা সমীক্ষার আওতায় রয়েছে বলে জানান। একদিকে রাজনীতি। সেই সঙ্গে সামাজিক আন্দোলন। আবার ওই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকেই বৃহত্তর ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠনেরও দাবি তুলে দেন তিনি। জল, জঙ্গল, জমির অধিকারের বিষয়টিও সামনে আনেন। ফলে এই সমাবেশের মঞ্চ থেকে তিনি আদিবাসী মন জেতারও চেষ্টা করেন।
‘টাইগার’ জয়রাম মাহাতো বলেন, ” ২০২৬-র বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের আসন গুলিতে আমরা প্রার্থী দেব। কোন আসনে আমরা প্রার্থী দেব তা আমাদের সমীক্ষা চলছে দলে। সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব।” তবে হাওয়ায় ভাসছে পুরুলিয়ার জয়পুর ও ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন।
বাম আমলে জঙ্গলমহলে বৃহত্তর ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠনে আন্দোলন করে আসছিল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো প্রয়াত শিবু সরেনের নেতৃত্বে এই আন্দোলন চলছিল। কিন্তু আজ শিবু সরেন নেই। সেই সময় শিবু সরেনের নেতৃত্বকে সামনে রেখেই আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতোও ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার ছেড়ে তিনি ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চাতে যোগদান করেন। সেখানেও তিনি বৃহত্তর ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠনে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু বিকাশ মোর্চার সঙ্গে মনকষাকষির পর তিনি অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অর্থাৎ আজসুতে যোগদান করেন। আজসু সুপ্রিমো সুদেশ মাহাতোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠনে তিনি সরব ছিলেন। কিন্তু ওই দাবি পূরণ হয়নি। এখানেও ব্যর্থ অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলে অভিযোগ। পরে ২০১৬ সাল থেকে আদিবাসী কুড়মি সমাজের ব্যানারে আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু আজও সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় অজিতপ্রসাদ মাহাতোর উপর আস্থা, ভরসা কমে যাচ্ছে ওই জনজাতির মানুষজনের।
সেখানেই মন জিতে নিয়েছেন ‘টাইগার’ জয়রাম মাহাতো। বাংলা- ঝাড়খণ্ডের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষজন মনে করছেন, তাদের অধিকার দাবি ও মনের কথা একমাত্র বলছেন, ঝাড়খণ্ডের ডুমরির বিধায়ক ‘টাইগার’। আর সেই কারণেই আম জনতা এদিন তাকে রীতিমতো কাঁধে চাপিয়ে মঞ্চে উঠিয়ে দেন। তবে এদিন শাসক দলকে আক্রমণ করেন তিনি। জঙ্গলমহলকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ডুমরির বিধায়কের কথায়, “এক আঁখ মে কাজল, এক আঁখ মে সুরমা। একদিকে জঙ্গলমহল। আরেকদিকে বাংলার অন্য অংশ। কিন্তু জঙ্গলমহল বঞ্চিত। এটা কেন?”