মণিপুরের কুট উৎসব। তা চাভাং কুট নামেও পরিচিত। প্রতি বছর ১ লা নভেম্বর গোটা রাজ্যজুড়ে কুকি গোষ্ঠীর লোকজন মরশুমের শেষ ফসল কাটার উৎসব হিসেবে ‘কুট’ পালন করেন। মণিপুরের ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই উৎসব। মূলত নতুন ফসল ঘরে তোলার পর প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিনটিতে রাজ্যে ছুটিও থাকে। এরপরও উৎসবে গা ভাসাতে পারে না কুকিরা। ২০২৩ সালে মণিপুরে জাতি সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর কুকি গোষ্ঠী এই উৎসব পালন করেনি। এবারও তারা এই উৎসব বয়কট করেছে।
কেন্দ্রের দাবি, মণিপুর এখন ‘শান্ত’। দীর্ঘ দু’বছরের বেশি সময় ধরে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকা মণিপুরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কুকি-বহুল জেলা চূড়াচাঁদপুরে মোদি বলেছিলেন, ‘মণিপুরবাসী, কথা দিচ্ছি আমি আপনাদের পাশে থাকব।’ কিন্তু হিংসাদীর্ণ রাজ্যে যে এখনও শান্তি ফেরেনি,তার প্রমাণ এই উৎসব বয়কট। এই সিদ্ধান্তের কারণও জানিয়েছে কুকিদের সংগঠন কুকি-জো কাউন্সিল। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তারা বলেছে, ‘গত তিন বছর ধরে এই উৎসব বয়কট করে আসছি। কারণ, এখন বহু পরিবারই ঘরবাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছে। তারা প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণও পায়নি। স্বজন হারিয়েছে তারা। এই দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে আমরা কীভাবে উৎসব পালন করতে পারি?’
কাউন্সিলের মুখপাত্র গিনজা ভুয়ালজং জানান, ‘মণিপুরে কুট উৎসব বহু দশক ধরেই পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটিকে রাজ্যজুড়ে ছুটি থাকে। তবে, ২০২৩ সালে জাতিগত হিংসা শুরু হওয়ার পর নিজেদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুকিরা’ ক্ষোভ উগরে তিনি সাফ জানিয়েছেন, ‘সরকারের কাছ থেকে কোনও স্থায়ী সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের উৎসব উদযাপন করব না’।
এদিকে কুট উপলক্ষে মণিপুরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা। তিনি কুটকে ‘কৃতজ্ঞতা, ঐক্য ও ফসল উদযাপনের উৎসব’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সেইসঙ্গে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করার আহ্বানও উঠে এসেছে তাঁর বার্তায়। উৎসবে নলোকনৃত্য পরিবেশন শিল্পীদের। এবছরও যার সাক্ষী হতে পারবেন না মানুষ। -ফাইল চিত্র