বেসরকারি কর্মীদের জন্য সরকারের যেসব সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলি একটি নির্দিষ্ট নম্বরের আওতায় আনতে চলেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ প্রত্যেক বেসরকারি কর্মচারীর একটি নির্দিষ্ট (ইউনিক) নম্বর থাকবে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকবে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি। প্রাথমিকভাবে এর নাম ঠিক হয়েছে, ‘ইউনিভার্সাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাকাউন্ট’। আগামী ২০২৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জন্য এই অ্যাকাউন্ট তৈরির কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। শ্রমমন্ত্রকের আওতায় যে খসড়া শ্রম শক্তি নীতি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে তারা। আপাতত যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি এই অ্যাকাউন্টের আওতায় আসবে, তার মধ্যে রয়েছে পিএফ, ইএসআই, প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা, ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস, ই-শ্রম, প্রধানমন্ত্রী শ্রমযোগী মনধন যোজনা। পরবর্তীকালে যোজনা বা প্রকল্পের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।দেশের শ্রম নীতি ঢেলে সাজার প্রক্রিয়াটি তিন ধাপে সম্পূর্ণ করতে চাইছে কেন্দ্র। তার জন্যই তৈরি হয়েছে শ্রম শক্তি নীতি। প্রথমপর্ব শেষ হবে ২০২৭ সালে। ২০৩০ সালে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব। তারপর শুরু হবে তৃতীয় পর্বের কাজ। ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে এই সংস্কারের কাজে গতি আনার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মূলত শ্রম সংক্রান্ত সবরকমের তথ্য এক জায়গায় আনা ও তার ডিজিটাল সংরক্ষণের কাজ হবে। তৈরি হবে একাধিক কাউন্সিল, যেগুলি কাজের বাজারে সুবিধাকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। কৃত্রিম মেধা বা এআই-কে কাজে লাগিয়ে কীভাবে চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য কর্মী পাওয়া যায়, সেই উদ্যোগও নেওয়া হবে। এর সঙ্গেই সাধারণ কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিকে একটি প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনার কাজ চলবে। শ্রম নীতির দ্বিতীয় পর্যায়ে এই তথ্যগুলির উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক কর্মীর জন্য আলাদা নম্বর সহ নয়া একটি পরিচয়পত্র আনবে কেন্দ্র। কীভাবে কাজ করবে এই ইউনিভার্সাল সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাকাউন্ট? সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, বর্তমানে পিএফের আওতায় থাকা কর্মীদের একটি করে ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর থাকে। কোনও কর্মী কর্মস্থল বা কর্মদাতা সংস্থা বদল করলেও সেই নম্বরটি অপরিবর্তিত থাকে। সেই নম্বরেই নয়া সংস্থায় পিএফের সুবিধা পান কর্মচারী। অর্থাৎ, বারবার নতুন করে অ্যাকাউন্ট চালু করতে হয় না। একইভাবে একটি মাত্র অ্যাকাউন্টের আওতায় সামাজিক সুরক্ষাগুলি এলে কোনও কর্মী যে কোনও সংস্থায়, যে কোনও রাজ্যে কাজ করলেও সরকারি সুবিধাগুলি পাওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ফলে যাবতীয় সুবিধা সুষ্ঠুভাবে এবং দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। সংগঠিত ও অসংগঠিত—উভয় ক্ষেত্রেই কর্মীরা এই নয়া উদ্যোগের ফলে উপকৃত হবেন বলে দাবি কেন্দ্রের। এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন বা ইপিএফও’র কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের সদস্য শিওপ্রসাদ তিওয়ারি বলেন, ‘সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত সাব কমিটির বৈঠকে এমনই একটি প্রস্তাব রাখা হয়। সব সুরক্ষা প্রকল্পকে যদি একটি মাত্র অ্যাকাউন্টের মধ্যে আনা যায়, তাহলে অবসর ও আপৎকালীন পরিষেবা চটজলদি পাওয়া সম্ভব। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তো বটেই, গোটা বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলিতে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির সুবিধা পাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। আমাদের দেশে বিশ্বমানের শ্রম নীতি চালু করতে গেলে প্রত্যেক কর্মীর জন্য অভিন্ন অ্যাকাউন্ট আনাটা জরুরি।’