• জলপাইগুড়িতে আজ থেকে ভ্রাম্যমাণ ন্যায্যমূল্যের বাজার, দুর্যোগের জেরে সবজির দফারফা, বাজারে আগুন
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দুর্যোগের জেরে ফসলের দফারফা। ফলে মাথায় হাত কৃষকদের। বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির আকাল। স্বাভাবিকভাবেই চড়া দাম। সুযোগ বুঝে শুরু ফাটকাবাজি। আগেই দামে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে গাজর। এবার ১০০ টাকা কেজি হল লঙ্কা। ৮০ টাকা কেজিতে পৌঁছে গিয়েছে ফুলকপি। বেগুন, পটল, টম্যাটো কিংবা বাঁধাকপি কিনতে গিয়ে হাতে রীতিমতো ছ্যাঁকা লাগছে। মটরশুঁটির কেজি ৩০০ টাকা। ছটপুজো মিটে গেলেও জলপাইগুড়ির বাজারে ৬০ টাকা পিস লাউ। জোগানে ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়তে শুরু করেছে আলু ও পিঁয়াজের। সবজির দর যাচাইয়ে রবিবার ছুটির দিনে কার্যত ব্যাগ হাতে কৃষি বিপণন দপ্তরের কর্মীদের জলপাইগুড়ির বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়। বিকেলে জমা পড়েছে সেই রিপোর্ট। তা খতিয়ে দেখে জেলার বিভিন্ন বাজারে টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা আচমকা হানা দিতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। 

    এদিকে আজ, সোমবার থেকে রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ সবজি বাজার চালু হচ্ছে জলপাইগুড়িতে। সুফল বাংলার গাড়ি থেকে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে আলু, পিঁয়াজের পাশাপাশি শাকসবজি। কৃষি বিপণন দপ্তরের জলপাইগুড়ির সহ অধিকর্তা দেবাঞ্জন পালিত বলেন, রবিবার আমরা বিভিন্ন বাজারে কর্মীদের পাঠিয়েছিলাম। কিছু ব্যবসায়ী একটু দাম বেশি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে সোমবার থেকে আমরা জলপাইগুড়ি শহরের বয়েলখানা ও ইন্দিরা কলোনি বাজারে ন্যায্যমূল্যের ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকান চালু করছি।

    এদিন সকালে ব্যাগ হাতে জলপাইগুড়ির বউবাজারে সবজি কিনতে এসে ক্ষোভ উগরে দেন শুকদেব রায়, সুবীর হাজরা। তাঁরা বলেন, গাজরের কেজি ১২০ টাকা। ৮০ টাকার নীচে ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে না। এতদিন সাদা আলু ২০ টাকা কেজিতে মিলছিল। এখন ২৫ টাকা চাওয়া হচ্ছে। পিঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ইন্দিরা কলোনির বাজারে এসেছিলেন সুস্মিতা রায়। বললেন, খিচুড়ি করব বলে মটরশুঁটির দাম জিজ্ঞেস করলাম। ৩০০ টাকা কেজি বলছে। বিহারের ফুলকপিতে স্বাদ নেই। সেটাই ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব নাকি বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

    জলপাইগুড়ির বেলাকোবা মুদিপাড়ায় বৃষ্টির জলে ডুবে যাওয়া সবজি খেতের পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন কৃষক রণজিৎ রায়। বললেন, জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ছিল। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। পাশেই জলে ডোবা ধান বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা গেল টিল্লু রায়কে। বললেন, আমার দু’বিঘা জমির ধান পুরোটাই জলে ডুবে গিয়েছে। তিন দিন ধরে জলে ভিজে ওই ধান গেঁজে যাচ্ছে। এবার পচন শুরু হবে। নবান্ন উৎসবের মুখে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেল। 

    রবিবার কিছুটা রোদের দেখা মেলায় মাঠ থেকে বৃষ্টির জলে ডোবা ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে কৃষকদের। জলপাইগুড়ির পোড়াপাড়ায় আশুতোষ রায় নামে এক কৃষককে দেখা গেল, ঘরে ফ্যান চালিয়ে ধান শুকাচ্ছেন। বললেন, ১৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। বেশিরভাগ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেল বৃষ্টিতে। এদিকে, বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখনও রিপোর্ট জমা পড়েনি বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শমা পারভীন। 
  • Link to this news (বর্তমান)