• কোটি কোটি টাকা নয়ছয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দু’টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র বন্ধ, বিক্ষোভ
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: জয়পুরের গোপালনগর ও চ্যাংডোবায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দু’টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে গ্রাহকরা থানায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও গ্রাহকদের টাকা ফেরতের দাবি তোলেন। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। তাঁদের অভিযোগ, জঙ্গল অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা বিশ্বাস করে স্থানীয় দু’টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু, সম্প্রতি কেন্দ্র দু’টি ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকী পরিষেবা কেন্দ্রে দেওয়া তাঁদের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কের খাতায় জমা হয়নি। এরপরেই তাঁরা একত্রিত হয়ে এদিন থানার দ্বারস্থ হন।  পুলিশ জানিয়েছে, আর্থিক প্রতারণার কারণে গোপালনগর এলাকা থেকে বাসিন্দারা এসেছিলেন। তাঁদের লিখিত অভিযোগপত্র দিতে বলা হয়েছে। তা দিলে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হবে। 

    এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জয়পুর শাখার ম্যানেজার বাবলু টুডুকে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেনি। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়পুরের জঙ্গল অধ্যুষিত গোপালনগর এলাকায় কাছাকাছি ব্যাঙ্ক নেই। সেখানকার বাসিন্দাদের ব্যাঙ্কের কাজ করতে গেলে প্রায় ৭কিলোমিটার দূরে জয়পুরে আসতে হয়। তবে গ্রাহকদের সুবিধার্থে কয়েকবছর আগে প্রথমে গোপালনগরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হয়। পরবর্তীকালে স্থানীয় চ্যাংডোবা গ্রামে আরও একটি কেন্দ্র খোলা হয়। কাছাকাছি ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাওয়ায় দু’টি কেন্দ্রই বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এলাকার বাসিন্দারা ওই কেন্দ্র থেকে আর্থিক লেনদেন করেন। এমনকী লক্ষ লক্ষ টাকা মেয়াদি জমা করার জন্যও ওই কেন্দ্রের উপর ভরসা করেন। সেই সুযোগে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের তিন পরিচালক গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে। টাকা জমা নিয়ে রশিদ দিলেও তা ব্যাঙ্কের খাতায় জমা করা হতো না। গ্রাহকরা যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য আপডেট করার নামে সিংহভাগ গ্রাহকের পাসবই নিয়ে নেওয়া হতো। দিনের পর দিন নানা অজুহাতে পাসবই রেখে দেওয়া হতো। সম্প্রতি ওই দু’টি পরিষেবা কেন্দ্রই ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতেই মহা বিপাকে পড়েন গ্রাহকরা। অনেকেই জয়পুরে ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের কাছ থেকে পরিষেবা কেন্দ্রে টাকা জমা নেওয়া হলেও তা ব্যাঙ্কের খাতায় জমা হয়নি। ওই খবর এলাকায় চাউর হতেই গ্রাহকরা একে একে ভিড় জমান ব্যাঙ্কে। শতাধিক গ্রাহক একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে রবিবার তাঁরা একত্রিত হয়ে জয়পুর থানার দ্বারস্থ হন। 

    গোপালনগরের বাসিন্দা রিনা সেনাপতি বলেন, আমি ১লক্ষ টাকা ১০ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে দিয়েছিলাম। একটি রশিদও দেওয়া হয়। কিন্তু, সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি আমার কোনও টাকাই জমা করা হয়নি। 

    মঞ্জু লোহার বলেন, আমরা লোকের জমিতে কাজ করে খাই। অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা পাসবইয়ে জমা করার জন্য গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে দিয়েছিলাম। এখন দেখছি কোনও টাকাই জমা করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বেলিয়া আমরা সবাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা বাণী লোহার বলেন, আমাদের দলের ৩লক্ষ ২২হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি টাকাও ব্যাঙ্কের খাতায় জমা হয়নি। ভুয়ো রসিদ দেওয়া হয়েছে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।
  • Link to this news (বর্তমান)