সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতুর নীচে ভাগীরথীর অস্থায়ী ঘাটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুণ্যস্নান করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পুণ্যার্থীদের। চরম অব্যবস্থার মধ্যে স্নান করছেন বাইরে থেকে মঠ-মন্দির দর্শনে আসা পুণ্যার্থীরাও। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই সপরিবারে স্নানের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে নবদ্বীপে আসেন। গৌরাঙ্গ সেতুর কাছে কোনও ফাঁকা জায়গায় গাড়ি পার্কিং করে তাঁদের স্নান সারতে দেখা যায়। সামনেই ঐতিহ্যপূর্ণ রাস উৎসব। এই সময় কয়েক হাজার মানুষ ওই ঘাটে স্নান করবেন। কিন্তু ঘাটটির বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ফলে যেকোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন ভক্ত ও পুণ্যার্থীরা। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই অস্থায়ী ঘাটটির চারদিকে মাটি ধসে গর্ত তৈরি হয়েছে। তাছাড়া, কোথায় গর্ত রয়েছে, বা কোথায় জলের গভীরতা কতখানি, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। ফলে ভাগীরথীতে স্নান করতে নেমে মাঝেমধ্যেই বিপদের মুখে পড়তে হয়। বহুদিন ধরে গৌরাঙ্গ সেতু সংলগ্ন উত্তর ও দক্ষিণ ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা একটি পাকা স্নানঘাটের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অভিযোগ, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের দুয়ারে আর্জি জানিয়েও তাঁদের হতাশ হতে হয়েছে। নবদ্বীপ মহিশুরা পঞ্চায়েতের উত্তর ও দক্ষিণ ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা গৌরাঙ্গ সেতুর নীচে ভাগীরথীর এই অস্থায়ী ঘাটে স্নান করতে যান। কিন্তু ওই স্নানের ঘাটটি সম্পূর্ণ কাঁচা। যত্রতত্র রয়েছে গর্ত। সেই গর্তে নেমেই স্নান করতে হয়। গৌরাঙ্গ সেতু দিয়েই নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন জামালপুর বুড়োরাজতলা এবং নবদ্বীপের বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিতে যান। বিশেষ করে প্রতি সোমবার কয়েক হাজার ভক্ত গৌরাঙ্গ সেতু হয়ে যাওয়ার পথে এই ঘাটে স্নান সারেন। গৌরাঙ্গ সেতু সংলগ্ন চিত্তরঞ্জন কলোনির বাসিন্দা সুরেন ঘোষ বলেন, অনেকদিন ধরে শুনছি এই ঘাটটি পাকা হবে। কিন্তু এখনও তা হল না। দক্ষিণ ঘোষপাড়ার বাসিন্দা কল্পনা ঘোষ বলেন, ঘাটের অনেক জায়গায় মাটি ধসে গিয়েছে। প্রতিদিন যেতে ভয় লাগে। তাই শুধু একাদশীর দিন যাই। নবদ্বীপ পুরসভার ১৯নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ঘোষপাড়া কালভার্ট থেকে নদীঘাটে যাওয়ার রাস্তাটির মাত্র ৫০০মিটার অংশ পাকা করা দরকার। হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মী ওঝা বলেন, গুরুবাড়ির উৎসবে এসেছি। জলের গভীরতা কতটা বোঝা যাচ্ছে না। জলে নেমে এগোতে সাহস হচ্ছে না।
তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য পিন্টু ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই গৌরাঙ্গ সেতুর নীচে একটি স্থায়ী স্নানঘাট তৈরির দাবি ছিল। কিন্তু এখনও পাকা স্নানঘাট তৈরি হল না। স্নানের ঘাটের কাছে তিনটি সরকারি শৌচাগারও তৈরি করা হয়েছে। ঘাটটির যা পরিস্থিতি তাতে যেকোনও মুহূর্তে বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদকে একাধিকবার জানিয়েছি।
জেলা পরিষদের সদস্যা আরজুবানু খাতুন বলেন, ঘাটটি পাকা করার জন্য আগেও জেলা পরিষদে আলোচনা করেছি। বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা করব। -নিজস্ব চিত্র